ই-পেপার |  ঢাকা, বাংলাদেশ  |  শনিবার | ২৮ জুন ২০২৫ | ১৪ আষাঢ় ১৪৩২ 
https://thedailydeshbarta.com/ad/1746347731_Lest-2.jpg
https://thedailydeshbarta.com/ad/1746347823_Lest-৩.jpg

সর্বশেষ আপডেট: শনিবার, ২৮ জুন, ২০২৫, ১৩:৪১
চলমান বার্তা:
গোলাগুলিতে রাজমিস্ত্রি নিহত: সুনামগঞ্জের দুর্গম গ্রামে অস্ত্রবাজির নেপথ্যে কী!
সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন, ২০২৫, ১৪:১৭  (ভিজিটর : )

সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার হাতিয়া গ্রামে বিগত দিনে আওয়ামী লীগের লোকজন ক্ষমতা দেখিয়েছেন। এলাকার জলমহাল, হাওরের বাঁধের কাজ, স্কুল-মাদ্রাসা, বিচার-সালিস সব নিয়ন্ত্রণ করেছেন। এখন এটি ভাঙতে চান বিএনপির লোকজন। নিয়ন্ত্রণ নিতে চান তাঁদের হাতে। এ কারণেই গ্রামে অশান্তি ও অস্ত্রবাজি বেড়েছে।

হাতিয়া গ্রামে দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের পেছনের কারণগুলোর কথা জানা গেল সরেজমিন ওই এলাকা ঘুরে, নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে। গত রোববার ওই গ্রামে গোলাগুলির ঘটনায় এক রাজমিস্ত্রি নিহত হওয়ার পর বিষয়টি আলোচনায় আসে।

দিরাই উপজেলার কুলঞ্জ ইউনিয়নের দুর্গম টাংনির হাওরপারে হাতিয়া গ্রাম। উপজেলা সদর থেকে চাপতির হাওর পাড়ি দিয়ে যেতে হয় ওই গ্রামে। ইঞ্জিনচালিত নৌকায় যেতে সময় লাগে দেড় ঘণ্টা। গ্রামের উত্তরে একই উপজেলার তারাপাশা, পূর্বে জগন্নাথপুর উপজেলায় গাদালিয়া গ্রাম। এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে যেতে নৌকা লাগে।

রোববার অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসীদের ধরতে সেনাবাহিনী প্রথমে হাতিয়া গ্রামে অভিযান চালায়। একপর্যায়ে ‘সন্ত্রাসীরা’ সেনাবাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। আত্মরক্ষার্থে সেনাবাহিনীও গুলি করে। গোলাগুলির পর ঘটনাস্থলে তারাপাশা গ্রামের আবু সাঈদ (৩৫) নামে এক রাজমিস্ত্রির গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যায়। গুলিবিদ্ধ হন তাঁর চাচাতো ভাই আলী আকবর (৩০)।

গত মঙ্গলবার দুপুরে গিয়ে হাতিয়া ও তারাপুর গ্রামের মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, হাতিয়া গ্রামের দুই পক্ষের এই দ্বন্দ্ব প্রায় এক যুগের পুরোনো। এর জেরে বিভিন্ন সময়ে মারামারি, অস্ত্র প্রদর্শন ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। মামলাও আছে উভয় পক্ষের মধ্যে।

দীর্ঘদিন গ্রামে একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তার করেছে আওয়ামী পক্ষ। গত বছরের ৫ আগস্টের পর বিএনপিপক্ষ গ্রামে নিজেদের আধিপত্য দেখাতে চাইলে উত্তেজনা বাড়ে। গ্রামের অনেকেই এসব কর্মকাণ্ডে বিরক্ত। অনেকে গ্রাম থেকে চলে গেছেন শহরে।

হাতিয়া গ্রামে এক পক্ষের নেতৃত্বে আছেন স্থানীয় কুলঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান যুবলীগ নেতা একরার হোসেন, অন্য পক্ষে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আতিকুর রহমান। এই দুজনই থাকেন সিলেটে। গ্রামে সক্রিয় তাঁদের অনুসারীরা। রোববার রাতে সেনাবাহিনীর অভিযানে বন্দুক, পাইপগান, গুলিসহ আটক হওয়া চারজনই একরার হোসেনের লোক।

হাতিয়া গ্রামের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাশে কয়েকটি দোকান। এ প্রতিবেদক নৌকা নিয়ে প্রথমে সেখানে যান। একটি দোকানে বসে কয়েকজন কথা বলছিলেন। রোববারের ঘটনা নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন তাঁরা। মধ্যবয়স্ক একজন বলছিলেন, ‘ঘটনা কুনতা না, ইতা তারার ক্ষমতা আর স্বার্থ নিয়া ঠেলাঠেলি। কুনতা অইলেই বন্দুক বার করিলাইন। মাঝখানও পুরা গাঁওর বদনাম।’

আলাপকালে জানা গেল, একরার হোসেন একসময় এই আসনের (সুনামগঞ্জ-২) সাবেক সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের লোক ছিলেন। তিনি ২০১১ সালে কুলঞ্জ ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হন। ওই নির্বাচনে হাতিয়া উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে গোলাগুলি ও ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। ভোট বন্ধ হয়ে যায়। পরে এই কেন্দ্রে পুনরায় ভোট হয় এবং একরার পরাজিত হন। এ ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছিল।

তখন চেয়ারম্যান হয়েছিলেন একই গ্রামের বাসিন্দা বিএনপি নেতা আহাদ মিয়া। আহাদ মিয়ার পক্ষে ছিলেন আতিকুর রহমান। এ কারণে আতিকুরের সঙ্গে একরারের দ্বন্দ্বের শুরু হয়। অবশ্য একরারের দাপটে টিকতে না পেরে আহাদ মিয়া একসময় আওয়ামী লীগে যোগ দেন। পরে একরার সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে ছেড়ে আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ গ্রুপে চলে যান। গ্রামের সবকিছু তিনি ও তাঁর লোকজনের নিয়ন্ত্রণে ছিল। তাঁর বিরুদ্ধে কেউ কোনো কিছু বলার সাহস পেত না। ২০১৬ সালের ১৭ জানুয়ারি গ্রামের পাশে তাঁর নিয়ন্ত্রণে থাকা জারলিয়া জলমহালের দখল নিয়ে আওয়ামী লীগের আরেক পক্ষের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে তিনজন মারা যান।

হাতিয়া গ্রামের একাধিক ব্যক্তির ভাষ্য, গত বছরের ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর গ্রামের স্কুলের সভাপতির পদ থেকে একরারকে বাদ দেওয়া নিয়ে আবার পুরোনো দ্বন্দ্ব নতুন করে চাঙা হয়। এ নিয়ে মারামারি ও পাল্টাপাল্টি মামলা হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে গ্রামের এক বাসিন্দা বলছিলেন, একরার হোসেন টাকা দিয়ে হাতিয়া ও পাশের আকিলনগর গ্রামের কিছু লোককে অস্ত্রবাজি করান। কেউ কিছু বললেই তাঁরা নানাভাবে হুমকি ও মারধরের শিকার হন।

গ্রামের বড়হাটির বাসিন্দা মোজাহিদ মিয়া (৫০) বলেন, ‘একরার হোসেন ক্ষমতা আর টাকার জোরে গ্রামটাকে জিম্মি করে রেখেছেন। সে–ই গ্রামে অস্ত্র আনছে। আগে তো লাঠিসোঁটা দিয়া মারামারি অইত। এখন গন্ডগোল লাগলেই বন্দুক চলে।’ তবে আরেকজন বললেন, একরার এখন কিছুটা নমনীয়। আতিকুর রহমানের পক্ষ নানাভাবে তাঁকে চাপে ফেলার চেষ্টা করায় পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে।

গ্রামবাসীর সঙ্গে আলাপ করে জানা গেল, গত বৃহস্পতিবার দুই পক্ষের দুই যুবকের মধ্যে কথা–কাটাকাটি হয়। এর জেরে শুক্রবার বিকেলে একরার হোসেনের পক্ষের লোকজন অস্ত্র নিয়ে আতিকুর রহমানের বাড়ির সামনে গিয়ে মহড়া দেন। এটির একটি ভিডিও প্রকাশ হয় ফেসবুকে। এরপর রোববার বিকেলে গ্রামে অভিযান চালায় সেনাবাহিনী।

সেনাবাহিনী অভিযানের খবর পেয়ে হাতিয়ার কিছু লোক পাশের তারাপাশা গ্রামে যান। সেনাবাহিনীর সদস্যরা সেখানে গেলে ওই লোকজন নৌকা নিয়ে পালিয়ে যান পাশের জগন্নাথপুর উপজেলার চিলাউড়া হলদিপুর ইউনিয়নের গাদালিয়া গ্রামে। সেনাবাহিনী তাদের পিছু নেয়। সেনাবাহিনী গ্রামে ঢোকার মুখে তাদের লক্ষ্য করে গুলি করেন ওই গ্রামে আশ্রয় নেওয়া হাতিয়ার লোকজন।

তারাপাশা গ্রামের বাসিন্দা সৈয়দ নাজমুল হুদা বলেন, ‘আমরা শুনেছি সেনাবাহিনী আত্মরক্ষার্থে গুলি ছোড়ে। এরপর পুরো গাদালিয়া গ্রাম ঘিরে রাখে। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে মাইকিং করে ওই গ্রামে কেউ ঢুকতে কিংবা বের হতে নিষেধ করা হয়। সারা রাত গ্রামে কেউ যেতে পারেনি।’

তারাপাশা গ্রামের আরেক বাসিন্দা বলেন, এর মধ্যেই তাঁরা খবর পান সেখানে একজন মারা গেছেন। পরে ভোররাতে গিয়ে সেখানে আবু সাঈদের লাশ দেখতে পান তাঁরা। তখন সেনাবাহিনী পরিবারের কাছে আবু সাঈদের গুলিবিদ্ধ লাশ তুলে দেয়। সেখানে আবু সাঈদের চাচাতো ভাই গুলিবিদ্ধ আলী আকবরকেও আহত অবস্থায় পান তাঁরা। আলী আকবর ও আবু সাঈদ গাদালিয়া গ্রামের শিপন মিয়ার বাড়িতে কাজে গিয়েছিলেন। সেখানেই তাঁরা গুলিবিদ্ধ হন।

বিএনপি নেতা আতিকুর রহমানের বাড়িতে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। মশহুদ মিয়া নামের একজন জানান, তিনি বাড়িতে নেই। এরপর মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

একরার হোসেনের মুঠোফোন বন্ধ পেয়ে তাঁর হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে কল ও বার্তা পাঠিয়েও সাড়া মেলেনি।
মতামত লিখুন:
আরও পড়ুন 
নির্বাচিত সংবাদ
সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনার জন্য প্রধান উপদেষ্টার অভিনন্দন, আগামী বছরের জন্য প্রস্তুতির নির্দেশনা
সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনার জন্য প্রধান উপদেষ্টার অভিনন্দন, আগামী বছরের জন্য প্রস্তুতির নির্দেশনা
বিএনপির সাথে ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাষ্ট্রদূতের বৈঠক
বিএনপির সাথে ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাষ্ট্রদূতের বৈঠক
যুক্তরাজ্যে বার্মিংহাম বিএনপির সভা
যুক্তরাজ্যে বার্মিংহাম বিএনপির সভা
মেট্রো স্টেশনে অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধার বিষয়ক মহড়া অনুষ্ঠিত
মেট্রো স্টেশনে অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধার বিষয়ক মহড়া অনুষ্ঠিত
চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা সহায়তা দিলেন তারেক রহমান
চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা সহায়তা দিলেন তারেক রহমান
আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বর্ণাঢ্য র‍্যালির আয়োজন
আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বর্ণাঢ্য র‍্যালির আয়োজন
আজ চালু হচ্ছে গুগল পে, থাকছে যেসব সুবিধা
আজ চালু হচ্ছে গুগল পে, থাকছে যেসব সুবিধা
https://thedailydeshbarta.com/ad/1745814561_RightPanelSquare.jpg
স্বত্ব © ২০২৫ দেশ বার্তা | সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী তোফায়েল আহমদ।
https://thedailydeshbarta.com/ad/1746003553_Web Ad Final-1.jpg
https://thedailydeshbarta.com/ad/1751095943_Lest-1.jpg