জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ‘শাস্তির হুমকি’ প্রত্যাখ্যান করে 'মার্চ টু এনবিআর' কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে এনবিআর এর আন্দোলনরতদের প্ল্যাটফর্ম — এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ।
আন্দোলনকারীরা বলছেন, “শনিবার সারা দেশের ট্যাক্স, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তর থেকে ঢাকা অভিমুখে ‘মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচি পালন করা হবে।
একই সঙ্গে এদিন থেকে দেশের ট্যাক্স, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তরে লাগাতার কমপ্লিট শাটডাউন চলবে। আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা শাটডাউনের বাইরে থাকবে।
সংস্কার ঐক্য পরিষদের আগে শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে এনবিআরের জনসংযোগ দপ্তর থেকে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি আসে।
সেখানে বলা হয়, “কর্মরত কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলে, অফিস থেকে বেরিয়ে গেলে কিংবা দেরিতে অফিসে হলে সরকারি বিধি মোতাবেক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এনবিআরের আগে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি আসে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকেও, যেখানে বদলির আদেশ পুনর্বিবেচনা ও অধ্যাদেশ সংশোধনের আশ্বাস দিয়ে আন্দোলনকারীদের কর্মসূচি প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে অর্থ মন্ত্রণালয় বলে, “এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে চলমান আন্দোলনের কারণে সৃষ্ট অচলাবস্থা নিরসনে বৃহস্পতিবার অর্থ উপদেষ্টার কার্যালয়ে আড়াই ঘন্টা ধরে আলোচনা হয়। অর্থ উপদেষ্টার সভাপতিত্বে ওই সভায় অর্থ সচিব, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান (এনবিআর) ও বোর্ডের ১৬ জন সদস্য তাতে অংশগ্রহণ করেন।”
বৃহস্পতিবারের ওই বৈঠকে অবশ্য এনবিআরের আন্দোলনরত কর্মীদের কোনো প্রতিনিধি যোগ দেননি।
সেদিন বৈঠক থেকে বেরিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান সাংবাদিকদের বলেছিলেন, আন্দোলনকারীদের কাছ থেকে ‘সিদ্ধান্ত’ এলে ‘আজকের মধ্যেই’ একটা সমাধান আসতে পারে।
তবে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলছিলেন, আগামী সপ্তাহে আরেকটি বৈঠক হবে। তখন একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
এনবিআর চেয়ারম্যান ও অর্থ উপদেষ্টার মুখ থেকে সেদিন ‘আশার’ কথা শোনা গেলেও নিজেদের দাবি ও কর্মসূচির বিষয়ে অটল থাকেন আন্দোলনকারীরা।
শুক্রবারের বিজ্ঞপ্তিতে তারা বলেন, “আজ অর্থ উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি এসেছে, যা এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের নজরে এসেছে।”
অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরে আন্দোলনকারীরা বলছেন, বৃহস্পতিবারের বৈঠকে আমন্ত্রণ না জানানোয় এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না।
তারা বলেন, সংকট নিরসনে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ যেকোনো সময় অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত রয়েছে।
গত মাসে এনবিআর দুই ভাগ করে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা ও রাজস্ব নীতি নামে দুটি স্বতন্ত্র বিভাগ করে অধ্যাদেশ জারি হয়। সেটি বাতিলের দাবিতে কলম বিরতিসহ নানা কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলনে নামেন এনবিআরের কর্মীরা।
তাদের আন্দোলনের মধ্যে সরকার পিছু হটে। বলা হয়, অধ্যাদেশ বাস্তবায়নে এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।
এরপর কাজে যোগ দিলেও আন্দোলনকারীরা এনবিআর চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবিতে অটল থাকেন এবং সংস্থার কার্যালয়ে তাকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করেন।
পরে সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নিরাপত্তায় অফিসে ফেরেন এনবিআর চেয়ারম্যান।
তিনি দায়িত্বে এসে আন্দোলনে থাকা কয়েক কর্মকর্তাকে 'স্ট্যান্ড রিলিজ', সেমিনার করতে চাইলে সে জন্য কক্ষ বরাদ্দ না দেওয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে তার সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে কর্মকর্তাদের।