বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন বলেছেন, ''উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদকে নগরবাসীর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।"
ইশরাকের অভিযোগ, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনকে ঘিরে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ‘আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন’ । এ জন্য উপদেষ্টা আসিফকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ইশরাক।
তিনি বলেন, উপদেষ্টা আসিফ ‘'ঔদ্ধত্যপূর্ণ' আচরণ’ করেছেন।
ইশরাকের কথায়, উপদেষ্টা আসিফ নিজেকে অন্যদের তুলনায় ‘শ্রেষ্ঠ’ হিসেবে তুলে ধরেছেন এবং তাকে ‘চরমভাবে হেয় করেছেন’।
ইশরাক বলেন,“ঢাকার অধিবাসীদের প্রতি চরম অবমাননাকর এই বক্তব্যর জন্যে তাকে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানাচ্ছি।"
গত ১৪ মে থেকে নগর ভবনের সামনে ‘ঢাকাবাসী’ ব্যানারে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে ইশরাক সমর্থক ও বিএনপি নেতাকর্মীরা। পরে ডিএসসিসি কর্মচারী ইউনিয়নও তাতে যোগ দেয়।
আন্দোলনকারীরা নগর ভবনের প্রধান ফটক, বিভিন্ন দপ্তরের দরজায় তালা লাগিয়ে দেয়। এতে সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
মাঝে ঈদ ঘিরে ছুটির কদিন নগর ভবনে ইশরাক সমর্থকদের আন্দোলনে পাওয়া যায়নি। ঈদের ছুটির শেষে অফিস খোলার প্রথম দিন থেকেই ফের সেখানে আন্দোলন শুরু করেন ইশরাক সমর্থকরা।
সে সময় আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি সেবা কার্যক্রমে অচলাবস্থা কাটাতে নিজের তত্ত্বাবধানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেন ইশরাক। জন্ম নিবন্ধন সনদসহ দৈনন্দিন জরুরি সব সেবা চালু থাকার ঘোষণা দিয়ে ইশরাক বলেছিলেন, অন্যান্য উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা কর্মকর্তারা অফিস করতে পারবে না।
এর মধ্যে নগর ভবনে কর্মচারীদের নিয়ে সভা করেন ইশরাক। সভার ব্যানারে তার নামের আগে লেখা ছিল ‘মাননীয় মেয়র’।
এরপর গত ১৮ জুন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, মেয়াদ ‘শেষ হয়ে যাওয়ায়’ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনের আর শপথ নেওয়ার সুযোগ নেই।
ইশরাকের ভাষ্য, "আসিফ বলেন, আমাকে তার নির্বাচনী এলাকা কুমিল্লার একটি উপজেলার জনৈক বিএনপি নেতা প্ররোচণা দিয়েছেন। এই আন্দোলনে অর্থ ও লজিস্টিক দিয়েছেন এবং তার কাছে নাকি প্রমাণ আছে। এই প্রমাণ তিনি জাতির সামনে তুলে ধরবেন অন্যথায় তাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।
"এখানেই তিনি থেমে থাকেন নাই। তিনি বলেছেন বিএনপির একটি অংশের সরকারের সাথে বোঝাপড়ার দূরত্ব তৈরি হওয়ার কারণে আমাকে ব্যবহার করা হয়েছে। তিনি বিএনপির মত ঐতিহ্যবাহী পুরানো বৃহৎ রাজনৈতিক দলকে হেয় করেছেন এবং একটি অসত্য অভিযোগ তুলেছেন। তিনি নিজেকে বিশাল কোনো মহামানব হিসাবে উপস্থাপন করেছেন। উনি হয়ত ভুলে গেছেন ওনার জন্মের আগে বিএনপির জন্ম হয়েছে।"
ইশরাক বলেন, "আসিফ এটাও বলেছে আমার পক্ষ থেকে যারা নেগোসিয়েট করতে এসছেন তারা শুধু আমার পক্ষে নেগোসিয়েট করেন নাই। আমার বিষয়টি সম্পূর্ণ আইনি এবং এখানে নেগোসিয়েট করার কোন সুযোগ নাই । আদালত স্পষ্ট করে রায় এর মাধ্যমে কি করতে হবে তা বলে দিয়েছে।
“তাহলে নেগোসিয়েট কারা করছে তা আমাকে জানাতে হবে, কারণ একমাত্র আমাদের দলীয় প্রধানের বাইরে অন্য কোন বাক্তিকে আদালতের রায় কার্যকর সংক্রান্ত যোগাযোগ ছাড়া অন্য কোন কথা বলার সম্মতি দেই নাই। তার এই অস্পষ্ট কথাবার্তায় প্রতীয়মান তিনি হয় মিথ্যা বলছেন না হয় তার বুদ্ধিমত্তা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় চালানোর জন্যে সম্পূর্ণ অযোগ্য।
"আসিফ বলেন, ইশরাক হোসেন অত্যন্ত দম্ভভরে ও অহংকারের সাথে সরকার কর্তৃক প্রশাসক হওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। বরঞ্চ বিনয়ের সাথে এটি প্রত্যাখ্যান করার কারণ হিসাবে বলতে হবে একজন বৈধ নির্বাচিত জন প্রতিনিধি ও রাজনীতিবিদের জন্যে এই প্রস্তাব অপমানজনক।"
ইশরাক বলেন, “সরকার কোন নির্বাচনকে বৈধতা দেবে না বলে আসিফ মাহমুদ বলেছেন। এটা কোন প্রক্রিয়ায় বাস্তবায়ন করা হবে এবং কবে? এখন পর্যন্ত তারা কোন কোন নির্বাচন অবৈধ ঘোষণা করতে পেরেছে? একটিও না। এর অর্থ এই দাঁড়ায় বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ কর্তৃক বৈধতা বহাল রাখা গেজেটকে পুরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বৈধতা দিচ্ছে না বা মানছে না। সেটা সরকার কর্তৃক উচ্চ আদালত অবমাননার শামিল নয় কি ?
“এই একই আদালত বাংলাদেশের সংবিধানের আর্টিকেল ১০৬ এর ধারা অনুযায়ী বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বৈধতা দেয়নি? বরঞ্চ উল্লেখযোগ্য উদাহারণ হিসাবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি নির্বাচন ২০২০ আমাদের মামলা ও রায়ের মাধ্যমে তৎকালীন নির্বাচনটির ফলাফল অবৈধভাবে ঘোষণা করা হয়েছিল সেটিই প্রমাণিত হয় এবং ফলাফল সংশোধনের মাধ্যমে সেটি আর বেশি সুদৃঢ় হয়েছে।
অনেক জায়গায় কোন নিয়োগ প্রক্রিয়া ছাড়া ওয়ার্ড সচিব হিসেবে এনসিপি সংশ্লিষ্ট বাক্তিদের ‘নিয়োগ দেওয়া হয়েছে’ বলে অভিযোগ তুলেছে ইশরাক।
এর মধ্যে মঙ্গলকার ইশরাক সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া রুবেলসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে।
এই প্রকৌশলীর সঙ্গে আসিফের যোগাযোগ নিয়ে ইশরাক বলেন,“হামলাকারীরা আওয়ামী ফ্যাসিস্ট আমলের মেয়রদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসাবে দুর্নীতি লুটপাট করেছে। তাদের মুল হোতা, গতকালকে আন্দোলনকারীদের হত্যা চেষ্টা করা গোলাম কিবরিয়া রুবেলের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগে রয়েছে। আসিফ মাহমুদ দায়িত্ব নেওয়ার পর রুবেল তার লুটপাটের হাতিয়ার হয়ে উঠেছিল বলে নগর ভবনের আনাচে কানাচে কথা হচ্ছে।
"প্রকৌশল বিভাগের কুখ্যাত রুবেল একদিনও আন্দোলনে ছিল না কিন্তু নিজেকে বিএনপি সমর্থক দাবি করে। তদবির করে কাজ ভাগাভাগির মাধ্যমে অবৈধ অর্থনৈতিক সুবিধা করে দেয় এনসিপি ও রাজনৈতিক কিছু নেতাদের। শুরু থেকেই আন্দোলনকারীদের বিরোধিতা করেছে। কথিত আছে সে এনসিপিতে যোগদান করেছে বা করবে।"
আসিফকে কথাবার্তার ‘লাগাম টেনে ধরার’ কথা বলেছেন ইশরাক।