শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলা থেকে ৪৭টি গরু নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন চারজন পাইকার। তাঁদের একজন কালাম মিয়া। উত্তরায় দিয়াবাড়ি পশুর হাটের ৮ নম্বর হাসিল আদায়ের ঘরের সামনে তিনটি গরু নিয়ে ক্রেতার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি।
আজ ৫ জুন দুপুর দেড়টার দিকে কথা হয় কালাম মিয়ার সঙ্গে। কালাম জানান, তাঁদের আনা ৪১টি গরু বিক্রি হয়ে গেছে। এর মধ্যে বুধবার বিক্রি হয়েছিল চারটি। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার রাতেই বিক্রি করেছেন ৩২টি গরু। আর আজ শুক্রবার সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে পাঁচটি গরু বিক্রি করেছেন। বাকি যে ছয়টি আছে, ওগুলোও দ্রুতই বেচা হয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা কামালের। সেই ছয়টি গরুর তিনটি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি।
দেশে পবিত্র ঈদুল আজহা উদ্যাপিত হবে আগামীকাল শনিবার। তাই আজই কোরবানির হাটের শেষ দিন। তবে হাটগুলোতে পশু থাকা সাপেক্ষে ঈদের দিনেও কোরবানির পশু বেচাকেনা হয়ে থাকে।
আজ বেলা দেড়টার দিকে উত্তরা দিয়াবাড়ির অস্থায়ী কোরবানির পশুর হাটে গিয়ে দেখা যায়, হাটে গরু রাখার নির্ধারিত জায়গাগুলো প্রায় ফাঁকা, গরু নেই বললেই চলে। হাটে যা কিছু অবিক্রীত গরু-খাসি রয়ে গেছে, সেসব নিয়ে রাস্তার কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়েছেন ব্যবসায়ী ও বিক্রেতারা। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন তাঁরা।
এদিকে হাটে কোরবানির পশু কিনতে আগ্রহী ক্রেতাদের উপস্থিতিও কম দেখা গেছে। এর মধ্যে বেলা পৌনে দুইটার দিকে হয়ে যায় এক পশলা বৃষ্টি। এমন পরিস্থিতিতে ক্রেতাদের উপস্থিতি আরও কমে যায়। ক্রেতা কম থাকায় কিছু ব্যবসায়ী গরু অন্য হাটে, নয়তো ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করায় হাটের ইজারাদারের প্রতিনিধিরা মাইকে ঘোষণা করছিলেন, বিক্রেতারা কেউ গরু নিয়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করবেন না।
পাবনার সাঁথিয়া এলাকার ব্যবসায়ী খালেক মজুমদার হাটের এক নম্বর হাসিল ঘরের কাছাকাছি স্থানে রাস্তার পাশে দুটি গরু নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। তাঁর পেছনে গরু রাখার নির্ধারিত জায়গাগুলো একেবারেই ফাঁকা। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ওই জায়গায়গুলোতে গরু ভর্তি ছিল।
খালেকের গরু দুটি মাঝারি আকারের। এর মধ্যে একটি গরুর জন্য তিনি ২ লাখ ১০ হাজার এবং আরেকটির জন্য ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা দাম চাইছেন। বেশ কয়েকজন ক্রেতা গরু দুটি একসঙ্গে কেনার জন্য দরদাম করেছেন। দুটি গরুর জন্য সর্বোচ্চ আড়াই লাখ টাকা দাম বলা হয়েছে।
খালেক মজুমদার বলেন, ঝড়বৃষ্টি মিলিয়ে বাজার বেশি সুবিধার না। সকাল থেকে ক্রেতাও খুব বেশি একটা নেই। তাঁর একটি গরুর দামই আড়াই লাখ টাকার কাছাকাছি। সেখানে দুটি গরুর জন্য ক্রেতারা ওই দাম বলছেন। তিন লাখ হলেও গরু দুটি বিক্রি করে এলাকায় চলে যাবেন বলে জানান তিনি।
মিরপুর ১২ নম্বরের পল্লবী এলাকা থেকে উত্তরা দিয়াবাড়ি হাটে গরু কিনতে গেছেন আসলাম উদ্দীন। তিনি বলেন, ‘বাসার কাছে মিরপুরের কালশী হাটে গিয়েছিলাম। কিন্তু যে দাম বলছে, সে অনুযায়ী গরু পছন্দ হয়নি। তাই উত্তরায় এসেছি। এখানেও গরু প্রায় শেষ। ব্যবসায়ীরা শেষ পর্যায়ে গরু না থাকার সুযোগে দাম ছাড়তে চাইছেন না।’ ১ লাখ ২০ হাজার থেকে দেড় লাখের মধ্যে মাঝারি আকারের একটি গরু কেনার ইচ্ছা রয়েছে বলেও জানান আসলাম।
হাটে আনা সব গরু বিক্রি শেষে ট্রাকে উঠে এলাকায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুত নাটোরের ৯ জন ব্যবসায়ী। তাঁদের একজন সিফাত আলী বলেন, ‘আমার সাতটা গরু দুপুরের আগেই বিক্রি হয়ে গেছে। এখন শুধু বাড়ি ফেরার অপেক্ষা। হাটে এখন কিছুটা বড় ও একেবারে ছোট আকারের গরু বেশি অবিক্রীত রয়ে গেছে।’
এদিকে হাটের খাসি বিক্রেতাদেরও ক্রেতার অপেক্ষায় বসে থাকতে দেখা গেছে। গরু কমে গেলেও হাটে এখনো পর্যাপ্ত খাসি রয়েছে বলে জানান হাটসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীরা। পছন্দের খাসি কেনা তিনজন ক্রেতার সঙ্গে কথা হলে দাম নিয়ে তাঁরা সন্তুষ্টির কথা জানান।
উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরের বাসিন্দা হারুনুর রশীদ একটি খাসি কেনেন ১৭ হাজার টাকায়। ওজন আন্দাজ করা না গেলেও খাসিটির আকার মাঝারি ধরনের।
হারুনুর রশীদ বলেন, সীমিত বাজেটের মধ্যে খাসি কেনা সম্ভব হবে কি না, এ নিয়ে দুশ্চিন্তা ছিল। বুধ ও বৃহস্পতিবার দুই দিন হাটে এসেছিলাম। আজ যে খাসি ১৭ হাজার টাকায় কিনলাম, ওই দুই দিন এমন আকারের খাসির দাম চাওয়া হয়েছিল ২৪-২৫ হাজার টাকা। ২০ হাজার দাম বলেও কিনতে পারিনি।
বৃষ্টির কারণে সড়ক বিভাজকের গাছের সঙ্গে ট্রিপল বেঁধে ছাউনির মতো করা হয়েছে। এর নিচে ২০টির বেশি খাসি নিয়ে বসে ছিলেন কুষ্টিয়ার ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম। এ ব্যবসায়ীর ভাষ্য, আগের দুই দিন একেবারেই খাসি বিক্রি হয়নি। আজ সকাল থেকে কিছু কিছু বিক্রি হচ্ছে। তবে যেমন ক্রেতার উপস্থিতি আশা করেছিলেন, হাটে তেমন ক্রেতা নেই বলেও জানান তিনি।
এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটির আওতাধীন কমলাপুর কোরবানির হাটে গিয়েও একই দৃশ্য দেখা গেছে। এ হাটেও গরু রাখার নির্ধারিত জায়গাগুলো ফাঁকা দেখা গেছে। কিছু জায়গা দুপুরের মধ্যেই একেবারে ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল। তবে হাটে অবিক্রীত যা কিছু গরু অবশিষ্ট রয়েছে, এগুলোর দাম বিক্রেতারা ছাড়ছেন না বলেও জানান ওই হাটে যাওয়া ক্রেতারা। অনেকেই আবার এ হাট থেকে কেনা গরুর দাম নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।
কমলাপুর হাটে ইজারাদারের প্রতিনিধি শাহীন আহমেদ বলেন, রাতে প্রচুর ক্রেতা ছিলেন, বিক্রিও অনেক হয়েছে। তবে ক্রেতা অনুযায়ী হাটে এখনো পর্যাপ্ত গরু রয়েছে। পাইকাররা আরও গরু হাটে আনছেন।