মিরসরাইয়ে রেললাইনে বসে কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শোনার সময় ট্রেনে কাটা পড়ে তিন বন্ধুর মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার জোরারগঞ্জ থানাধীন আরশীনগর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন-সোনাপাহাড় এলাকার দিদারুল আলমের ছেলে আরাফাত, আবু তাহেরের ছেলে আনিসুর রহমান ও জিয়াউর রহমানের ছেলে রিয়াজ উদ্দিন। রেলওয়ে ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, পাঁচ বন্ধু রেললাইনের ওপর বসেছিলেন। এ সময় হঠাৎ ট্রেন এসে পড়লে দুজন নিরাপদে সরে যেতে পারলেও তিনজন মেঘনা ট্রেনে কাটা পড়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন। পরে স্থানীয় জনতা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।
মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক এরশাদ উল্লাহ বলেন, স্থানীয়রা তিনজনকে হাসপাতালে নিয়ে আসার পর পরীক্ষা শেষে তাদের মৃত ঘোষণা করা হয়। ভুক্তভোগীদের শরীরে আঘাতের চিহ্ন থাকলেও আমরা নিশ্চিত নই ট্রেনের আঘাতে মৃত্যু হয়েছে কি না। স্থানীয়রা লাশ নিয়ে গেছেন। তারা ডেথ সার্টিফিকেটও নেননি। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে।
জোরারগঞ্জ থানার ওসি আব্দুল হালিম জানান, পুলিশ ঘটনাস্থল ও হাসপাতালে পৌঁছার আগে তিনজনের লাশ স্বজনরা নিয়ে যায়। তিনিও জেনেছেন ভুক্তভোগীরা অমনোযোগী হয়ে রেললাইনে বসে হেডফোনে গান শুনছিল। তাই এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। তিন বন্ধুর এমন মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শুক্রবার সরেজমিন দেখা যায়, তিনজনের বাড়িতেই শোকের মাতম চলছে। নিহতদের মধ্যে আনিস বিয়ে করেছেন মাত্র ২০ দিন আগে। আনিসের মৃত্যুর খবরে তার ঘরে স্বজনরা ছুটে এসেছেন। আহাজারি করতে করতে ঘরের ভেতর মূর্ছা যাচ্ছেন তার স্ত্রী। আনিসের বাবা আবু তাহেরকে দেখা যায়, ঘরের এক কোণে বসে আছেন। চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছিল তার।
আরাফাতের ঘরে গিয়ে দেখা যায়, আহাজারি করতে করতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন তার নানি বিবি আমেনা। জ্ঞান ফিরলেই চিৎকার করে কেবল বলছেন, ‘আমার সোনার চানরে কোথায় নিলা আল্লাহ।’ স্বজনরা জানান, শৈশবেই আরাফাত মাকে হারান। মায়ের মৃত্যুর পর নানি বিবি আমেনা কোলে-পিঠে করে মানুষ করেছেন আরাফাতকে। জিয়াউর রহমানের একমাত্র ছেলে রিয়াজ। ছেলে চাকরি করে কিছুটা আয়-রোজগার করায় সচ্ছলতা ফিরছিল সংসারে। তবে বৃহস্পতিবারের দুর্ঘটনা যেন সব এলোমেলো করে দিয়েছে। জিয়াউর রহমান আহাজারি করে বলছিলেন, ‘আমার শান্ত ছেলেটারে কেন নিয়ে গেলা আল্লাহ।’