গাজাগামী ত্রাণবাহী নৌবহর ‘ফ্রিডম ফ্লোটিলা’ থেকে আটক বাংলাদেশি আলোকচিত্রী শহিদুল আলমসহ শতাধিক মানবাধিকারকর্মীকে ইসরায়েলের আশদোদ বন্দরে নেওয়া হয়েছে।
বুধবার (৮ অক্টোবর) এক বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে দখলদার দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সূত্র
এতে বলা হয়, গাজা উপকূলে পৌঁছানোর আগেই আন্তর্জাতিক জলসীমায় ফ্লোটিলার ৮টি জাহাজ আটক করে ইসরায়েলি নৌবাহিনী, এবং প্রায় ১৫০ স্বেচ্ছাসেবীকে হেফাজতে নেয়। ইসরায়েল দাবি করেছে, বর্তমানে আটক সকলে সুস্থ আছেন এবং শিগগিরই তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে।
আটক হওয়া জাহাজগুলোর একটি, ‘কনশানস’ (Conscience) নামের জাহাজে ছিলেন বাংলাদেশি আলোকচিত্রী ও মানবাধিকারকর্মী শহিদুল আলম। বর্তমানে তিনি অন্যান্য আন্তর্জাতিক অধিকারকর্মীদের সঙ্গে আশদোদ বন্দরে আটক অবস্থায় রয়েছেন।
ফ্লোটিলাটি ‘ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি)’ আয়োজিত নয়টি জাহাজের বহর, যা দুই সপ্তাহ আগে ইতালি থেকে যাত্রা শুরু করেছিল। একটি বড় জাহাজে প্রায় ১০০ জন এবং বাকি আটটি ছোট নৌযানে আরও ৫০ জন কর্মী ছিলেন। আয়োজকদের দাবি, নৌবহরে দুইজন ইসরায়েলি নাগরিকও ছিলেন।
বুধবার ভোরে গাজা উপকূল থেকে প্রায় ১৫০ নটিক্যাল মাইল দূরে ভূমধ্যসাগরে ইসরায়েলি নৌবাহিনীর বিশেষ ইউনিট শায়েতেত ১৩ দ্রুত অভিযান চালায়। হেলিকপ্টার থেকে রশি বেয়ে নেমে কমান্ডোরা ‘কনশানস’ নামের ৬৮ মিটার দীর্ঘ যাত্রীবাহী জাহাজে ওঠে এবং নিয়ন্ত্রণ নেয়।
ফ্লোটিলা সংগঠকরা অভিযোগ করেছেন, আমাদের জাহাজে ইসরায়েলি সামরিক হেলিকপ্টার থেকে হামলা চালানো হয়েছে। আটটি নৌযান অবৈধভাবে আটক ও ছিনতাই করা হয়েছে।
এফএফসি আরও জানায়, আটক মানবাধিকারকর্মী, সাংবাদিক ও চিকিৎসকদের অজানা স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সংগঠনের দাবি, জাহাজগুলোতে ১ লাখ ১০ হাজার ডলারের বেশি মূল্যের ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও পুষ্টি সহায়তা ছিল, যা গাজার হাসপাতালগুলোতে পৌঁছানোর কথা ছিল।
ঘটনাটির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে তুরস্ক। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একে “সমুদ্র ডাকাতির শামিল এবং আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন” বলে মন্তব্য করেছে।
তুরস্ক জানায়, নৌবহরে তাদের নাগরিক ও সংসদ সদস্যরাও ছিলেন। প্রেসিডেন্ট রেজেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেছেন, গত দুই বছরে ইসরায়েল হিটলারের চেয়েও ভয়াবহ গণহত্যা চালিয়েছে।
এর আগের সপ্তাহে গাজামুখী ৪০টিরও বেশি নৌকা আটক করে ইসরায়েল, যেখানে ৪৫০ জনেরও বেশি কর্মী ছিলেন। অতীতেও গাজাগামী ত্রাণবাহী জাহাজে হামলা চালানো, ত্রাণ জব্দ ও কর্মীদের আটক করে বহিষ্কারের ঘটনা ঘটেছে।
প্রায় ২৪ লাখ মানুষের বসবাসের গাজা উপত্যকায় ১৮ বছর ধরে অবরোধ বজায় রেখেছে ইসরায়েল। চলতি বছরের মার্চে সীমান্ত পুরোপুরি বন্ধ করে খাদ্য ও ওষুধ প্রবেশে বাধা দেওয়ায় অঞ্চলটি দুর্ভিক্ষে পড়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি হামলায় ৬৭ হাজার ১০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। টানা বোমাবর্ষণে অঞ্চলটি এখন বাসযোগ্যতার সীমা ছাড়িয়ে গেছে।
দেশবার্তা/আরএইচ