ই-পেপার |  ঢাকা, বাংলাদেশ  |  মঙ্গলবার | ১৪ অক্টোবর ২০২৫ | ২৯ আশ্বিন ১৪৩২ 
https://thedailydeshbarta.com/ad/1756793693_Self-1.jpg
https://thedailydeshbarta.com/ad/1756793710_Self-2.jpg

সর্বশেষ আপডেট: সোমবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২৫, ২৩:২৮
চলমান বার্তা:
উচ্চশব্দের হর্ন আমদানি-বাজারজাতকরণে নিষেধাজ্ঞা আসছে
ইউএনবি
প্রকাশ: সোমবার, ১১ আগস্ট, ২০২৫, ১২:১০ আপডেট: ১২.০৮.২০২৫ ১৩:৪৩  (ভিজিটর : )
প্রতীকী ছবি/ সংগৃহীত

প্রতীকী ছবি/ সংগৃহীত

রাজধানীতে শব্দদূষণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ঢাকার রাস্তায় এখন সহনীয় মাত্রার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি শব্দদূষণ হচ্ছে। এ কারণে নতুন কয়েকটি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে শব্দদূষণ বিধিমালা নতুন করে করা হচ্ছে।

শব্দদূষণের শাস্তি বাড়ানোসহ বেশ কয়েকটি বিষয় সংযুক্ত করে ২০০৬ সালের বিধিমালা সংশোধন করে ‘শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০২৫’-এর খসড়া করেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়।

‘শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬’ অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল এক মাসের জেল বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ড। খসড়া বিধিমালা অনুযায়ী এ শাস্তি সর্বোচ্চ দুই বছরের জেল বা ২ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ড।

খসড়া বিধিমালায় যানবাহনের হর্ন আমদানি, বাজারজাতকরণ ও বাজানোর উপর নিষেধাজ্ঞার বিধিও যুক্ত হচ্ছে নতুন বিধিমালায়। বিভিন্ন যানবাহনের হর্ন কত জোরে বাজাতে পারবে, সেই গ্রহণযোগ্য মাত্রা (মানমাত্রা) নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।

পাশাপাশি শব্দ উৎপাদনকারী আতশবাজি-পটকা ফোটানোর ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি যুক্ত করা হয়েছে। কেউ আতশবাজি ফোটাতে পারবে না। বিশেষ প্রয়োজনে ফোটাতে হলে অনুমতি নিতে হবে। একই সঙ্গে মাইক, লাউড স্পিকার, মিউজিক সিস্টেম ব্যবহারের ওপর বিধি-নিষেধ অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে বিধিমালায়। রাত ৯টার পর উচ্চ শব্দে গান বাজানো কিংবা কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা যাবে না।

নতুন শব্দদূষণ বিধিমালার বিষয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ ইউএনবিকে বলেন, ২০০৬ সালের বিধিমালায় কিছু বিষয় স্পষ্ট করা নেই। নতুন বিধিমালায় সেগুলো স্পষ্ট করা হয়েছে। এছাড়া আতশবাজি, হর্নসহ কিছু বিষয় বিধিমালায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন ক্ষেত্রে শাস্তিও বাড়ছে।

সচিব বলেন, নতুন শব্দদূষণ বিধিমালা খুব শিগগিরই চূড়ান্ত করা হবে। খসড়াটি চূড়ান্ত করার জন্য আমরা ইতোমধ্যে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করেছি। খসড়ার ওপর মতামত নেওয়ার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে ২১টি মন্ত্রণালয় থেকে খসড়ার বিষয়ে মতামত পেয়েছি। খসড়াটি আমাদের ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে। সবার মতামত পেলে আবার একটা মিটিং হবে।

তিনি আরও বলেন, আগস্ট মাসের মধ্যে বিধিমালাটি চূড়ান্ত করা হবে। এরপর এটি আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হবে। সেখান থেকে ফেরত আসলে তা গেজেট আকারে প্রকাশের জন্য পাঠানো হবে।

মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা বা অন্য কোনো ধর্মীয় উপাসনালয়; ঈদের জামাত, ওয়াজ মাহফিল, জানাজা, নাম কীর্তন এবং শবযাত্রাসহ অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠান; অ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিস, ইফতার ও সেহরীর সময় প্রচার, সরকারি কয়েকটি কার্যক্রমসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এ বিধিমালা কার্যকর হবে না বলে খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে।

উচ্চ শব্দের হর্নে নিষেধাজ্ঞা

প্রস্তাবিত বিধিমালায় বলা হয়েছে, গ্রহণযোগ্য মানের বেশি শব্দের হর্ন আমদানি ও বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান অনুমতি দিতে পারবে না। কোনো ব্যক্তি মোটর, নৌ বা অন্য কোনো যানে গ্রহণযোগ্য মানের বেশি শব্দের হর্ন ব্যবহার করতে পারবেন না।

নীরব এলাকায় চলাচলকালে যানবাহনে কোনো প্রকার হর্ন বাজানো যাবে না জানিয়ে বিধিমালায় বলা হয়েছে, কোনো মোটরযান চালক, মালিক বা পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত শব্দ সৃষ্টিকারী কোনো যন্ত্র, যন্ত্রাংশ বা হর্ন মোটরযানে স্থাপন, পুনঃস্থাপন বা ব্যবহার করতে পারবে না বা করার অনুমতি দিতে পারবে না।

কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত শব্দমাত্রার অতিরিক্ত শব্দমাত্রা সৃষ্টিকারী কোনো যন্ত্র, যন্ত্রাংশ, মাইক বা হর্ন আমদানি, উৎপাদন, বাজারজাতকরণ, বিক্রয়ের জন্য প্রদর্শন, মজুদ, বিতরণ, বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পরিবহন বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে পারবে না বলে খসড়ায় জানানো হয়েছে।

শব্দ ও হর্নের মানমাত্রা নির্ধারণ

বিধিমালা অনুযায়ী, এলাকাভিত্তিক শব্দের মানমাত্রা নীরব এলাকায় দিনে ৫০ ও রাতে ৪০ ডেসিবেল। এছাড়া আবাসিক এলাকায় দিনে ৫৫ ও রাতে ৪৫, মিশ্র এলাকায় দিনে ৬০ রাতে ৫০, বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে ৭০ ও রাতে ৬০ এবং শিল্প এলাকায় দিনে ৭৫ রাতে ৭০ ডেসিবেল। এর বেশি মাত্রায় শব্দ করলে শাস্তির মুখে পড়তে হবে।

ভোর ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দিন এবং রাত ৯টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত রাত্রিকালীন সময় হিসেবে চিহ্নিত বলেও খসড়া বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে। বর্তমান বিধিমালাতেও এটি রয়েছে। মোটর যান ও যান্ত্রিক নৌযানের শব্দের মানমাত্রাও আগের মতো রয়েছে।

তবে নতুন করে মোটর যান ও যান্ত্রিক নৌযানের হর্নের মানমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। খসড়ার অনুযায়ী, মোটরযানের মধ্যে দুই বা তিন চাকার হালকা যান ও অন্যান্য হালকা যানের (কার, মাইক্রোবাস, পিকআপ ভ্যান ইত্যাদি) শব্দের মানমাত্রা ৮৫ ডেসিবেল। মাঝারি যানের (মিনিবাস, মাঝারি ট্রাক, মাঝারি কাভার্ড ভ্যান ইত্যাদি) ৯০ ডেসিবেল। ভারী যানের (বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, লরি ইত্যাদি) ১০০ ডেসিবেল এবং যান্ত্রিক নৌযানের হর্নের মানমাত্রা ১০০ ডেসিবেল। এর বেশি শব্দে হর্ন বাজালে শাস্তির মুখে পড়তে হবে।

খসড়া বিধিমালায় বলা হয়েছে, শব্দের নির্ধারিত মাত্রা অতিক্রম করলে; ওভারপাস, ফ্লাইওভার, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বা রেল লাইন পাশে শব্দ নিরোধক ব্যবস্থা স্থাপন না করলে কর্তৃপক্ষ শাস্তির মুখে পড়বে।

এছাড়া অনুমতি নেওয়ার পর নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি শব্দে গান-বাজনা করলে এবং রাত ৯টার পর তা অব্যাহত রাখলে, শব্দ উৎপাদনকারী আতশবাজি ব্যবহার করলে, অনুমতি নিয়েও নির্ধারিত সময়ের পর আতশবাজি ব্যবহার করলে, বনভোজনে শব্দের মানমাত্রার অতিক্রমকারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করলে, নির্মাণ কাজের ক্ষেত্রে যন্ত্রপাতির ব্যবহারের বিধি-নিষেধ অনুসরণ না করলে, কারখানার ভেতরে যন্ত্রপাতির কাছে ব্যক্তির জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা না রাখলে এবং কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পালন না করলে শাস্তি পেতে হবে। এক্ষেত্রে প্রতিবার অপরাধের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ এক মাস কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ড।

যানবাহনের হর্ন সংক্রান্ত কোনো নিয়ম লঙ্ঘন করলে প্রতিবার অপরাধের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ এক মাস কারাদণ্ড বা ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ড।

খসড়া বিধিমালায় বলা হয়েছে, নিয়ম ভেঙে হর্ন উৎপাদন, আমদানি ও বাজারজাতকরণ করলে সর্বোচ্চ ২ বছরের জেল বা ২ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড। অতিরিক্ত শব্দের হর্ন বিক্রি, বিক্রির জন্য প্রদর্শন, মজুদ, বিতরণ, বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পরিবহন করলে সর্বোচ্চ এক মাস কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ড পেতে হবে।

পেশাদার বা অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান ও নবায়নের ক্ষেত্রে শব্দদূষণ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ ও পরীক্ষা গ্রহণ অন্তর্ভুক্ত হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ পরিবেশ অধিদপ্তরের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রশিক্ষণের বিষয়বস্তু ও ব্যাপ্তি নির্ধারণ করবে।

নতুন বিধিমালায়ও পিকনিক বা বনভোজনের উদ্দেশ্যে শব্দের মানমাত্রা অতিক্রমকারী যন্ত্রপাতির ব্যবহার, নির্মাণ কাজের ক্ষেত্রে যন্ত্রপাতির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ, নির্বাচন উপলক্ষে শব্দের মানমাত্রা অতিক্রমকারী যন্ত্রপাতির ব্যবহার ও আবদ্ধ স্থানে শব্দের মানমাত্রা অতিক্রমকারী যন্ত্রপাতির ব্যবহার, কারখানার ভেতরে বা যন্ত্রপাতির কাছে কর্মরত ব্যক্তিদের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিষয়গুলো রয়েছে।

আতশবাজি ব্যবহারের নিষেধাজ্ঞা

খসড়া বিধিমালায় বলা হয়েছে, শব্দ উৎপাদনকারী আতশবাজি ও সমজাতীয় অন্যান্য যন্ত্র বা কৌশল ব্যবহার করা যাবে না। কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় শর্ত সাপেক্ষে উৎসব, অনুষ্ঠান ও সমাবেশ ইত্যাদির প্রয়োজনে আতশবাজি ব্যবহারের অনুমতি দিতে পারবেন। এ অনুমতি কোনোভাবেই রাত ৯টা পার হবে না। দৈনিক সর্বোচ্চ ৫ ঘণ্টার বেশি ও বিশেষ ব্যতিক্রম ছাড়া ক্রমাগত সর্বমোট ২ দিনের বেশি দেওয়া যাবে না এবং শব্দের মানমাত্রা ৯০ ডেসিবেলের বেশি পার হতে পারবে না।

বিধিমালায় বলা হয়েছে, শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে প্রত্যেক ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন এবং নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষগুলো নিজ নিজ এলাকার মধ্যে আবাসিক, বাণিজ্যিক, মিশ্র, শিল্প ও নিরব এলাকা চিহ্নিত করে স্ট্যান্ডার্ড সংকেত বা সাইনবোর্ড স্থাপন ও সংরক্ষণ করবে।

খসড়ায় বলা হয়েছে, অনুমতি না নিয়ে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোনো এলাকায় শব্দের সর্বোচ্চ মানমাত্রা অতিক্রম করতে পারবে না। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ ও শব্দযন্ত্র ব্যবহারের অনুমোদিত মানমাত্রা পার হলে দায়িত্বরত কর্মকর্তা নিজ এখতিয়ারভুক্ত এলাকায় প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

ঘোষিত নীরব এলাকার ভেতর কোনো প্রতিষ্ঠান ওভারপাস, ফ্লাইওভার, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বা রেললাইন স্থাপন করলে যানবাহন ও রেলগাড়ি চলাচলের সময় অনুমোদিত শব্দের মানমাত্রার বেশি শব্দ উৎপন্নের সম্ভাবনা থাকলে রেল বা সড়ক অ্যালাইনমেন্ট বরাবর উভয় পাশে শব্দ নিরোধক ব্যবস্থা স্থাপন করতে হবে।

এতে বলা হয়েছে, কর্তৃপক্ষ নীরব এলাকা ছাড়া শর্ত সাপেক্ষে রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও সমাবেশে রাত্রিকালীন সময়ে পাবলিক অ্যাড্রেসিং সিস্টেম, মাইক, লাউড স্পিকার, এমপ্লিফায়ার ব্যবহারের অনুমতি দিতে পারবেন। এ অনুমতি কোনোক্রমেই রাত ৯টার বেশি সময়ের জন্য দেওয়া যাবে না। একই সঙ্গে শব্দের মানমাত্রা ৯০ ডেসিবেল এর বেশি পার করা যাবে না।

মতামত লিখুন:
আরও পড়ুন 
নির্বাচিত সংবাদ
ইনোভিশনের জরিপে ৬ বিভাগে এগিয়ে বিএনপি
ইনোভিশনের জরিপে ৬ বিভাগে এগিয়ে বিএনপি
ডেঙ্গুতে আরও ৩ জনের মৃত্যু
ডেঙ্গুতে আরও ৩ জনের মৃত্যু
‘আরেকটি ১/১১-এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ফিরলে কারও রক্ষা হবে না’
‘আরেকটি ১/১১-এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ফিরলে কারও রক্ষা হবে না’
অর্থনীতিতে নোবেল পেলেন ৩ অধ্যাপক
অর্থনীতিতে নোবেল পেলেন ৩ অধ্যাপক
ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবন সাময়িকভাবে ‌‘কারাগার’ ঘোষণা
ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবন সাময়িকভাবে ‌‘কারাগার’ ঘোষণা
স্বত্ব © ২০২৫ দেশ বার্তা | সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী তোফায়েল আহমদ।
https://thedailydeshbarta.com/ad/1756793725_Self-3.jpg
https://thedailydeshbarta.com/ad/1756793740_Self-4.jpg