ই-পেপার |  ঢাকা, বাংলাদেশ  |  মঙ্গলবার | ১৪ অক্টোবর ২০২৫ | ২৯ আশ্বিন ১৪৩২ 
https://thedailydeshbarta.com/ad/1756793693_Self-1.jpg
https://thedailydeshbarta.com/ad/1756793710_Self-2.jpg

সর্বশেষ আপডেট: সোমবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২৫, ২৩:২৮
চলমান বার্তা:
সম্মানী বা ভাতার নামে অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছেন বোর্ড কর্মকর্তারা
শিক্ষাবোর্ডগুলোতে তুঘলকি কাণ্ড, সম্মানীর টাকা হরিলুট
বছরে ৯ শিক্ষা বোর্ডের গচ্চা যাচ্ছে ৯ কোটি টাকার ওপরে
নিজামুল হক বিপুল
প্রকাশ: বুধবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১৫:৪৪ আপডেট: ০৫.০৯.২০২৫ ১৬:৩৭  (ভিজিটর : )
ফাইল ছবি

ফাইল ছবি


দুর্নীতি, অনিয়ম ও নানা কায়দায় শিক্ষা বোর্ডগুলোতে অর্থ লুটপাটের তথ্য পাওয়া গেছে। এসএসসির নম্বরপত্র লিখন, যাচাই, স্বাক্ষর আর প্রেরণ, নিয়ম ভেঙ্গে পাবলিক পরীক্ষার মূল সনদপত্র লিখনসহ আরও নানাখাতে সম্মানী বা ভাতার নামে অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছেন বোর্ড কর্মকর্তারা। শিক্ষা বোর্ডগুলোর বিরুদ্ধেও নিয়ম না মেনে অতিরিক্ত টাকা দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

শিক্ষা বোর্ডগুলোর ২০২২-২৩ অর্থবছরের বিল-ভাউচার ও শিক্ষা অডিট অধিদপ্তরের অডিট আপত্তি প্রতিবেদন থেকে এসব অনিয়মের তথ্য পাওয়া গেছে। ওই প্রতিবেদনে শিক্ষা অডিট অধিদপ্তর জড়িত ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক বলেও সুপারিশ করেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা তো দূরের কথা, কোনো তদন্ত হয়েছে বলেও জানা যায়নি। 

তবে শিক্ষা বোর্ডগুলো বলছে, আন্তঃশিক্ষা বোর্ড কমিটি ও সংশ্লিষ্ট বোর্ডের অর্থ কমিটির অনুমোদন সাপেক্ষে এ ভাতা বা সম্মানি নেওয়া হচ্ছে। 

অবশ্য এই প্রতিবেদনের বিষয়ে ওই সময়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছিলেন, প্রতিবেদনের আলোকে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হবে। 

অডিট প্রতিবেদনটি যাচাইবাছাই করে পাওয়া তথ্য থেকে জানা গেছে, শিক্ষা বোর্ডের নিয়ম মতে পাবলিক পরীক্ষার মূল সনদপত্র লিখন, যাচাই, স্বাক্ষর ও প্রেরণসংক্রান্ত কাজের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সনদপ্রতি ৬ টাকা সম্মানি পাওয়ার কথা। কিন্তু নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে একেকজন কর্মকর্তাকে দেওয়া হচ্ছে ছয়গুণ বেশি অর্থাৎ ৩৬ টাকা সম্মানি। এতে বছরে ৯ শিক্ষা বোর্ডের গচ্চা যাচ্ছে ৯ কোটি ৮ লাখ ১৭ হাজার ১১৯ টাকা।

একইভাবে এসএসসির নম্বরপত্র লিখন, যাচাই, স্বাক্ষর আর প্রেরণের জন্য পরীক্ষার্থী প্রতি সাড়ে ১২ টাকার পরিবর্তে ২২ টাকা আর একই খাতে এইচএসসি পরীক্ষার্থীপ্রতি ১৫ টাকার পরিবর্তে ৩৭ টাকা সম্মানি নেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এই খাতে সম্মানির নামে বছরে আরও ২ কোটি ১৬ লাখ ৭৩ হাজার ২৯ টাকা নেন তারা। 

শুধু এসব খাত নয়, আরও অন্তত ১৩ খাতে একই কায়দায় অনিয়মের মাধ্যমে সম্মানির নামে বছরে অন্তত সাড়ে ২৩ কোটি টাকা অতিরিক্ত হাতিয়ে নিচ্ছেন বোর্ড কর্মকর্তারা। এর বাইরেও অন্যান্য খাতেও শিক্ষা বোর্ডগুলোর কর্মকর্তাদের দুর্নীতির কারণে বছরে আরও সাড়ে ১২ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে সরকার ও শিক্ষা বোর্ডগুলোর। 

বর্তমানে দেশে ১১টি শিক্ষা বোর্ড রয়েছে। এর মধ্যে ৯টি হচ্ছে সাধারণ শিক্ষা বোর্ড এবং মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড রয়েছে দুটি। সাধারণ শিক্ষাবোর্ডগুলো হলো- ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, দিনাজপুর, সিলেট, যশোর, বরিশাল, কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ। 

এই ১১টি শিক্ষা বোর্ডে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৩ হাজার। শিক্ষা বোর্ডগুলো মূলত মাধ্যমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের পাবলিক পরীক্ষা নেওয়া, পাসকরা শিক্ষার্থীদের সনদ দেওয়া, সনদের ভুলক্রটি থাকলে তা সংশোধন করা বোর্ডগুলোর প্রধান কাজ। এর বাইরে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হলে তার পাঠদানের অনুমোদন, স্বীকৃতি দেওয়া, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটি দেওয়া, শিক্ষার্থীদের ভর্তিসহ সংশ্লিষ্ট আরও কিছু কাজ করে।

অডিট প্রতিবেদন অনুযায়ী, এসএসসি ও এইচএসসির পরীক্ষার উত্তরপত্র পুনঃনিরীক্ষণ কাজের জন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বছরে দেওয়া হয় ২ কোটি ১৬ লাখ ৭৩ হাজার ২৯ টাকা সম্মানি। অথচ ময়মনসিংহ, সিলেট, চট্টগ্রাম, ঢাকা, দিনাজপুর, রাজশাহী, যশোর ও বরিশাল শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তারা প্রাপ্যতা না থাকলেও এই খাতটি থেকে বিপুল পরিমাণ এই সম্মানি নিচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশমতে, পরীক্ষার পূর্বপ্রস্তুতি, পরীক্ষা পরিচালনা, ফল প্রকাশ, নিবন্ধন, সনদপত্র ও নম্বরপত্র লেখার জন্য শুধু সম্মানি পাবেন। এর বাইরে কোনো কাজের জন্য তারা কোনো সম্মানি পাবেন না। অথচ আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয়ক কমিটির অনুমোদনে তারা এই সম্মানি নিচ্ছেন। তবে কোন বোর্ড বছরে কত টাকা সম্মানি নিচ্ছে তা নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

এ ছাড়াও প্রাপ্যতা না থাকা সত্ত্বেও একাদশ শ্রেণির অনলাইন ভর্তিসংক্রান্ত কাজের জন্য বছরে ১ কোটি ৫৪ লাখ ৩ হাজার ৬২০ টাকা,  এসএসসি ও এইচএসসির ব্যবহারিক পরীক্ষার উত্তরপত্র যাচাইয়ের জন্য ৪৬ লাখ ১৮ হাজার ৩৬৮ টাকা, জেএসসি পরীক্ষার নিবন্ধন, সনদপত্রের স্বাক্ষর ও যাচাইয়ের নামে ৪২ লাখ ৭০ হাজার ৬৫৭ টাকা, বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার সনদে নাম ও বয়স সংশোধনী কাজের জন্য ১ কোটি ৯৯ হাজার ১০ টাকা, পাবলিক পরীক্ষার ফল প্রকাশসংক্রান্ত কাজের জন্য ১ কোটি ৪৬ লাখ ২২ হাজার ২৩৬ টাকা, পাবলিক পরীক্ষা পরিচালনা কাজের জন্য ১ কোটি ২৫ লাখ ৭৭ হাজার ৯৫২ টাকা, পাবলিক পরীক্ষার পূর্বপ্রস্তুতি কাজের জন্য ১ কোটি ১৪ লাখ ৮৬ হাজার ৬৬০ টাকা, পাবলিক পরীক্ষার নিবন্ধন কাজের জন্য ৮২ লাখ ৬৬ হাজার ৫০৮ টাকা ভাতা দেওয়া হচ্ছে শিক্ষা বোর্ড কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।

‘দ্য ইন্টারমিডিয়েট অ্যান্ড সেকেন্ডারি এডুকেশন অর্ডিন্যান্স, ১৯৬১’ অনুযায়ী, প্রশ্ন ছাপার কাজে বিজি প্রেসে যাতায়াত ও অবস্থানের জন্য কোনো ভাতার বিধান না থাকলেও এ খাত থেকেও টাকা নিচ্ছেন বোর্ড কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। 

এছাড়া এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ছাপার কাজে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বাংলাদেশ গভর্নমেন্ট প্রেসে (বিজি প্রেস) যাতায়াত ও অবস্থান দেখিয়ে ওই অর্থবছরে ১ কোটি ১ লাখ ১১ হাজার ৩২ টাকা নিয়েছেন ৮টি শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

এই সম্মানির বাইরে শিক্ষা বোর্ডগুলোতে নানা খাতে অনিয়মের কারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে আরও সাড়ে ১২ কোটি টাকার গচ্চা গেছে সরকার ও শিক্ষা বোর্ডগুলোর। এই ৯ বোর্ডের মধ্যে ঢাকা, সিলেট, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের ওই অর্থবছরে বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গৃহ নির্মাণ, মেরামত ও কম্পিউটার ক্রয় করার জন্য ১ কোটি ২০ লাখ ৭৪ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা ঋণ প্রদান করেছে। 

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী, দীর্ঘমেয়াদি ঋণের জন্য ১০.৭৫ টাকা সুদ আদায় করার কথা। অথচ বোর্ডগুলো আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সিদ্ধান্তের অজুহাত দেখিয়ে ৫ শতাংশ হারে সুদ আদায় করছে। এতে বছরে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে বোর্ডগুলোর।

এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার গোপনীয় মুদ্রণ কাজের ব্যয় নির্বাহের জন্য বিজি প্রেসকে শেয়ার মানির নামে ওই অর্থবছরে ৯৫ লাখ ৩৪ হাজার ১১৭ টাকা প্রদান করে ৯ শিক্ষা বোর্ড। কিন্তু প্রশ্নপত্র মুদ্রণ করার পর বিজি প্রেসকে বিল পরিশোধ করা হয়েছে। আবার শিক্ষা বোর্ডের অধ্যাদেশ অনুযায়ী, বিল পরিশোধের কোনো সুযোগও নেই। ফলে প্রাধিকার বহির্ভূতভাবে শেয়ার মানি প্রদান করা শিক্ষা বোর্ডগুলোর বিপুল অঙ্কের টাকা ক্ষতি হয়েছে। 

সূত্রমতে, সিলেট ও চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ওএমআরসহ মূল উত্তরপত্র, নৈর্ব্যক্তিক শিট ও ব্যবহারিক উত্তরপত্রের জন্য প্রাক্কলিত মূল্য উপেক্ষা করে অতিরিক্ত বিল পরিশোধ করার ১ কোটি ৬৪ লাখ ৬৪ হাজার ২৮০ টাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট, কুমিল্লা, ঢাকা, দিনাজপুর, যশোর ও বরিশাল বোর্ডের বাড়ি ভাড়া, আসবাবপত্র সরবরাহ ও যানবাহন ভাড়া বাবদ ওই বছরে ১০ কোটি ৬৭ লাখ ৮৬২ টাকা পরিশোধ করা হয়। কিন্তু সরবরাহকারীদের কাছ থেকে ভ্যাট কর্তন করায় সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে ১ কোটি ১৪ লাখ ৫৪ হাজার ৮১০ টাকা।

এর বাইরেও কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড টেস্ট রিপোর্ট ছাড়াই অনিয়মিতভাবে ৩ কোটি ৯০ লাখ ৮২ হাজার ৫শ এবং সিলেট, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও ঢাকা বোর্ড ওই বছরে কোটেশন প্রদ্ধতিতে নির্ধারিত ক্রয়ের সিলিং অতিক্রম করে অনিয়মিতভাবে আরও ৬৪ লাখ ৬৭ হাজার ৫১ টাকা ব্যয় করেছে। 

এসব বিষয়ে অনিয়ম, দুর্নীতির বিষয়ে জানতে একাধিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তারা কেউই এ বিষয়ে কথা বলতে চাননি।  

অবশ্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, শিক্ষা বোর্ডগুলো তাদের নিজস্ব আইনে চলে। তবে ১৯৬১ সালের অধ্যাদেশকে আরও যুগোপযোগী করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বোর্ড আইন করার কাজ চলছে। আইনটি হলে বোর্ডগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জবাবদিহির আওতায় আসবেন এবং বোর্ডে আর্থিক শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।

মতামত লিখুন:
আরও পড়ুন 
নির্বাচিত সংবাদ
ইনোভিশনের জরিপে ৬ বিভাগে এগিয়ে বিএনপি
ইনোভিশনের জরিপে ৬ বিভাগে এগিয়ে বিএনপি
ডেঙ্গুতে আরও ৩ জনের মৃত্যু
ডেঙ্গুতে আরও ৩ জনের মৃত্যু
‘আরেকটি ১/১১-এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ফিরলে কারও রক্ষা হবে না’
‘আরেকটি ১/১১-এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ফিরলে কারও রক্ষা হবে না’
অর্থনীতিতে নোবেল পেলেন ৩ অধ্যাপক
অর্থনীতিতে নোবেল পেলেন ৩ অধ্যাপক
ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবন সাময়িকভাবে ‌‘কারাগার’ ঘোষণা
ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবন সাময়িকভাবে ‌‘কারাগার’ ঘোষণা
স্বত্ব © ২০২৫ দেশ বার্তা | সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী তোফায়েল আহমদ।
https://thedailydeshbarta.com/ad/1756793725_Self-3.jpg
https://thedailydeshbarta.com/ad/1756793740_Self-4.jpg