বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মানববন্ধনে হামলার অভিযোগে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার আন্দোলনের সংগঠক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনিসহ ৪২ জনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার জুয়েল চন্দ্র শীল কোতোয়ালি মডেল থানায় এ অভিযোগ করেন।
কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, অভিযোগটি যাচাই-বাছাই চলছে। তদন্ত শেষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
লিখিত অভিযোগে ১২ জনের নাম উল্লেখ করার পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা ৩০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তাঁরা হলেন মহিউদ্দিন রনি (৩০), রাকিন (২৫), সুনান (২৪), সিফাত (২৩), শামিম (২৫), আল মুসা (২৬), বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক নেতা সিফা (২২), দাইয়ান (২১), কনটেন্ট ক্রিয়েটর নুরুজ্জামান কাফি (৩০), এইচ এম আবুল খায়ের (৫০), হাসপাতালের দালাল নুরুন নাহার (৪০) ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর মো. সিয়াম ওরফে ন্যাভাই (৩৮)।
লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হাসপাতালের ফটকের সামনে সুষ্ঠু কর্মপরিবেশ নিশ্চিতের দাবিতে মানববন্ধন করছিলেন চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ সময় অভিযুক্ত ব্যক্তিরা চাপাতি, রড, হকিস্টিক, লাঠিসোঁটাসহ দেশি অস্ত্র নিয়ে অতর্কিত হামলা করেন। মহিউদ্দিন রনি রড দিয়ে পরিচ্ছন্নতাকর্মী রফিকুল পাটোয়ারীর মাথায় আঘাত করে রক্তাক্ত জখম করেন। অন্য অভিযুক্তরা মানববন্ধনে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের ওপর এলোপাতাড়ি আঘাত করেন। এতে অফিস সহায়ক মো. পারভেজ, আয়া সেলিনা আক্তার, অফিস সহায়ক মো. রাব্বি, পরিচ্ছন্নতাকর্মী মো. শামীমসহ কয়েকজনের হাত ভেঙে যায়। এ ছাড়া নার্স ও আয়াদের পোশাক ছিঁড়ে শ্লীলতাহানির অভিযোগও আনা হয়েছে। পথচারী ও স্থানীয় লোকজনের হস্তক্ষেপে হামলাকারীরা সরে যান। পরে আহত ১১ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। উপপরিচালক এস এম মনিরুজ্জামানকে প্রধান করে গঠিত কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
আন্দোলনকারীদের পাল্টা অভিযোগ
গতকাল বিকেলে নগরের অশ্বিনী কুমার হলে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেন মহিউদ্দিন রনি। তিনি অভিযোগ করেন, হাসপাতালের কিছু কর্মচারী ও দালাল তাঁদের শান্তিপূর্ণ অনশন কর্মসূচিতে হামলা করেছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের উসকানিতে এ ঘটনা ঘটেছে বলে তিনি দাবি করেন।
হামলায় তাঁদের অনেক শিক্ষার্থী আহত হলেও স্বাস্থ্য খাত সংস্কারের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।
তবে শুক্রবার আন্দোলনকারীদের কোনো কর্মসূচি হয়নি।
১৭ দিন ধরে স্বাস্থ্য খাত সংস্কারের তিন দফা দাবিতে বরিশালে নানা কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। ছাত্র-জনতার ব্যানারে আন্দোলনের অংশ হিসেবে গত শুক্রবার থেকে বুধবার পর্যন্ত ছয় দিনে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়ক সাড়ে ২৯ ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন আন্দোলনকারীরা। এতে যাত্রী ও চালকেরা দুর্ভোগের শিকার হন। একই সঙ্গে হাসপাতালের মূল ফটকের সামনে কয়েকজন শিক্ষার্থী দাবি আদায়ে তিন দিন ধরে অনশন করছিলেন।
আন্দোলন ও মহাসড়ক অবরোধের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার সকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু জাফর বরিশালে আসেন। তিনি ওই দিন দুপুরে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের সম্মেলনকক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, চিকিৎসক, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে আলোচনা করেন। আলোচনায় মহাপরিচালক শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলেও আন্দোলনকারীরা স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বরিশালে না আসা পর্যন্ত আন্দোলন প্রত্যাহার করবেন না বলে জানান।
এমন পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে হাসপাতালে অনশনকারী শিক্ষার্থীরা কয়েকজন কর্মচারীকে লাঞ্ছিত করার জেরে হাসপাতালের কর্মচারীরা একত্র হয়ে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দেন। এ সময় কয়েকজনকে মারধর করতেও দেখা যায়। পরে তাঁদের অনশন পণ্ড হয়ে যায়।
আন্দোলনকারীদের তিন দফা দাবি হলো শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজসহ দেশের সব সরকারি হাসপাতালে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, পর্যাপ্ত দক্ষ জনবল নিয়োগ, আধুনিক যন্ত্রপাতি ও ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করা; স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ দেশের সব হাসপাতালে দুর্নীতি প্রতিরোধে প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধি, দলীয় লেজুড়বৃত্তিক চিকিৎসকদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা, ডিজিটাল অটোমেশন ও স্বচ্ছ জবাবদিহিমূলক টাস্কফোর্স গঠন এবং স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনকে জনগণের ভোগান্তির বিষয় শুনে তদন্ত সাপেক্ষে আবার সুপারিশ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে জোর পদক্ষেপ নেওয়া।