অক্টোবর মাস বিশ্বব্যাপী ‘পিঙ্ক মান্থ’ বা স্তন ক্যান্সার সচেতনতা মাস হিসেবে পালন করা হয়।
এ উপলক্ষে মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির পাবলিক হেলথ বিভাগ, ‘আমরা নারী’ এবং এর সহযোগী সংগঠন ‘আমরা নারী রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’-এর যৌথ উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আমিনুল ইসলাম হলে স্তন ক্যান্সার সচেতনতা বিষয়ক সেমিনার ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে বিশেষ বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের মেডিকেল অনকোলজিস্ট ডা. জাহাঙ্গীর আলম এবং শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বন্ধ্যাত্ব বিশেষজ্ঞ ও ল্যাপারোস্কোপিক সার্জন অধ্যাপক ডা. ইশরাত জাহান (ইলা)।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন প্রফেসর ডা. এ. বি. এম. আলাউদ্দিন চৌধুরী, বিভাগীয় প্রধান, পাবলিক হেলথ বিভাগ; প্রফেসর গিয়াস উদ্দিন আহসান, উপদেষ্টা (স্ট্র্যাটেজি ও ইনোভেশন); প্রফেসর ডা. এস. এম. মহবুব উল হক মজুমদার, ডিন, ফ্যাকাল্টি অব হেলথ অ্যান্ড লাইফ সায়েন্সেস; এবং ডা. নাদিরা মেহরিবান, সহযোগী অধ্যাপক, পাবলিক হেলথ বিভাগ।
অনুষ্ঠানে আমরা নারী ও আমরা নারী রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট-এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান সমন্বয়কারী এম এম জাহিদুর রহমান বিপ্লব বলেন, নারীদের নিজেদের প্রতি যত্নবান হতে হবে। নিয়মিত আত্মপরীক্ষা, স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং ভয় না পেয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া—এই পদক্ষেপগুলোই স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায়। আমরা চাই, স্তন ক্যান্সার মৃত্যুর প্রতীক না হয়ে সচেতনতার প্রতীক হয়ে উঠুক।
তিনি আরও জানান, অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর ২০২৫ সময়কালে ঢাকাসহ সারাদেশে ৫০টি সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ও ক্যাম্পেইন আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানান, স্তন ক্যান্সার মূলত স্তনের কোষে অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধির ফল। প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্তকরণ ও যথাযথ চিকিৎসা নিলে এই রোগ শতভাগ নিরাময়যোগ্য। সার্জারি, কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি ও আধুনিক ইমিউনোথেরাপির সমন্বিত চিকিৎসা বর্তমানে অত্যন্ত কার্যকর। তবে সচেতনতা, সময়মতো চিকিৎসা ও জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তনই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
গবেষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১৩ হাজার নারী স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন, যার মধ্যে প্রায় অর্ধেক মৃত্যুবরণ করেন প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্ত না হওয়ার কারণে। দেশের মোট ক্যান্সার রোগীর প্রায় এক-ষষ্ঠাংশই স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত। নিয়মিত আত্মপরীক্ষা, ম্যামোগ্রাম এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করলে এই মৃত্যুহার অনেকাংশে কমানো সম্ভব।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, নারীদের উচিত নিজের শরীরের পরিবর্তনের বিষয়ে সচেতন থাকা। স্তনে নতুন কোনো গুটি, ত্বকের ভাঁজ বা কুঁচকানো, বোঁটা থেকে অস্বাভাবিক স্রাব, কিংবা স্তনের আকারে পরিবর্তন হলে তা বড় সতর্কবার্তা হতে পারে। নিয়মিত পরীক্ষা, যেমন ম্যামোগ্রাম, আল্ট্রাসনোগ্রাফি এবং প্রয়োজনে বায়োপসি—জীবন বাঁচানোর অন্যতম কার্যকর উপায়।
আমরা নারী একটি অরাজনৈতিক ও অলাভজনক সংগঠন, যা নারীর ক্ষমতায়ন, স্বাস্থ্যসুরক্ষা ও সামাজিক উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে কাজ করছে। এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান আমরা নারী রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট নারীর অধিকার, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও নিরাপদ খাদ্য বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা ও সচেতনতামূলক কাজ করে আসছে।
বক্তারা আশা প্রকাশ করেন, সচেতনতা বৃদ্ধি ও সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশেও স্তন ক্যান্সারজনিত মৃত্যুহার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করা সম্ভব হবে।