উত্তর বাংলাদেশের আঞ্চলিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণ ও ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যে রংপুরকে অবিলম্বে পূর্ণাঙ্গ প্রদেশ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে রংপুর প্রদেশ বাস্তবায়ন পরিষদ। এক কেন্দ্রিক সরকারের ওপর অনাস্থা প্রকাশ করে তারা মুখ্যমন্ত্রীসহ ৯ সদস্যের প্রাদেশিক সরকার এবং দুই কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট গঠনের মতো ৯ দফা যুগান্তকারী দাবি উত্থাপন করেছে। এসব দাবি দ্রুত বাস্তবায়ন না হলে রংপুরবাসী কঠোর আন্দোলনে যাবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।
মঙ্গলবার সকালে রংপুর মহানগরীর জুলাই চত্বরে অনুষ্ঠিত জরুরি সংবাদ সম্মেলনে পরিষদের নেতারা তাদের দাবি ও আন্দোলনের রূপরেখা তুলে ধরেন।
পরিষদের সভাপতি আমিন উদ্দিন বিএসসি আঞ্চলিক বৈষম্যের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, এক কেন্দ্রিক সরকার দিয়ে ১৮ কোটি জনগণের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, বেকারত্ব, বৈষম্যসহ সব মৌলিক চাহিদা পূরণ করা সম্ভব নয়। দেশজুড়ে ক্ষমতার যে পাহাড়সম কেন্দ্রীভবন, তার নির্মম শিকার রংপুর অঞ্চল। গত কয়েক মাসেও আমরা আশানুরূপ কোনো বরাদ্দ বা সুবিধা পাইনি। এমনকি, আমাদের জন্য বরাদ্দকৃত এক হাজার শয্যার হাসপাতাল অজ্ঞাত কারণে অন্য জেলায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বৈষম্যের এই চিত্র আর চলতে দেওয়া যায় না।
তিনি আরও যোগ করেন, দেশের বৃহৎ জনসংখ্যার পরিষেবা বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে সুশাসন ও জনগণের আকাঙ্ক্ষার শাসন পদ্ধতি নিশ্চিত করতে হলে রংপুরসহ দেশে ৯টি প্রদেশ এবং ফেডারেল পদ্ধতির কেন্দ্রীয় সরকার ও প্রাদেশিক সরকার গঠন অপরিহার্য।
সাধারণ সম্পাদক ডা. আব্দুস সাদেক জিহাদী বলেন, প্রাদেশিক সরকার গঠনের দাবি কোনো বিচ্ছিন্ন দাবি নয়, এটি জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। প্রাদেশিক সরকার না থাকলে বিভিন্ন অঞ্চলের সমস্যাগুলো সংসদে সঠিকভাবে উপস্থাপন করা সম্ভব হয় না এবং বরাদ্দ বৈষম্য থেকেই যায়। আমরা দীর্ঘদিন ধরে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে আসছি, কিন্তু আর অপেক্ষা নয়। আমাদের যৌক্তিক দাবিগুলো উপেক্ষিত হলে আমরা বৃহত্তর রংপুরের আপামর জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কঠোর থেকে কঠোরতর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবো।
পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক এবিএম মশিউর রহমান বলেন, এই আন্দোলন শুধু রংপুরের উন্নয়ন নয়, এটি দেশের ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করে সুশাসন নিশ্চিতের আন্দোলন। আমরা চাই সংবিধান সংশোধন করে একটি টেকসই রাষ্ট্র কাঠামো গড়ে তোলা হোক, যেখানে কেউ সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে না।রংপুর প্রদেশ বাস্তবায়ন পরিষদের এই দাবিগুলো বাংলাদেশের রাষ্ট্র কাঠামো ও প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের বিষয়ে নতুন করে ভাবনার জন্ম দিয়েছে। আঞ্চলিক বৈষম্য দূরীকরণের এই আন্দোলন আগামী দিনগুলোতে উত্তর জনপদের রাজনীতিতে এক নতুন মাত্রা যোগ করতে চলেছে
পরিষদের ৯ দফা দাবি এর মধ্যে প্রধান বিষয়গুলো হলো
রংপুরকে অবিলম্বে পূর্ণাঙ্গ প্রদেশ ঘোষণা ও একজন মুখ্যমন্ত্রীসহ ৯ সদস্যের প্রাদেশিক সরকার গঠন; শ্রমজীবী, কর্মজীবী ও পেশাজীবী জনগণের প্রতিনিধিত্বে ২৫০ সদস্যের প্রাদেশিক পার্লামেন্ট গঠন; দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে অংশীদারিত্বমূলক গণতন্ত্র নিশ্চিত করতে সংবিধানে ‘এক ব্যক্তির দুই ভোট’ প্রণয়ন; জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ও আইন প্রণয়নে ভারসাম্য আনার জন্য দুই কক্ষ বিশিষ্ট জাতীয় পার্লামেন্ট (নিম্নকক্ষ ও উচ্চকক্ষ) গঠন; বাজেট বরাদ্দে ৫০% অর্থ প্রাদেশিক সরকার এবং ৫০% কেন্দ্রীয় সরকারের জন্য নির্ধারণ; সংবিধান সংশোধন, রাষ্ট্র সংস্কার, মানবাধিকার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাসহ কল্যাণকর রাষ্ট্র বিনির্মাণের লক্ষ্যে জাতীয় সরকার গঠন; অবিলম্বে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নসহ উত্তর জনপদের উন্নয়নে স্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা; প্রদেশ, পার্লামেন্ট ও প্রশাসনিক কাঠামোতে স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।