ই-পেপার |  ঢাকা, বাংলাদেশ  |  বুধবার | ১৫ অক্টোবর ২০২৫ | ৩০ আশ্বিন ১৪৩২ 
https://thedailydeshbarta.com/ad/1756793693_Self-1.jpg
https://thedailydeshbarta.com/ad/1756793710_Self-2.jpg

সর্বশেষ আপডেট: বুধবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২৫, ১২:০২
চলমান বার্তা:
পর্যটকদের হতাশা, সংস্কারের দাবিতে সরব স্থানীয়রা
টানা ২৮ দিন পানির নিচে রাঙামাটির ‘ঝুলন্ত সেতু’
জাহেদা বেগম, রাঙামাটি
প্রকাশ: বুধবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৫, ১২:২৪  (ভিজিটর : )

অনিন্দ্য সুন্দর পার্বত্য জেলা রাঙামাটির প্রতীক ও পর্যটনের মুখ্য আকর্ষণ ‘ঝুলন্ত সেতু’। আশির দশকের গোড়ার দিকে পর্যটন করপোরেশন তবলছড়ি এলাকায় কাপ্তাই হ্রদের উপর এ সেতুটি নির্মাণ করে। চার দশকেরও বেশি সময় ধরে সেতুটি পর্যটকদের প্রধান গন্তব্য হলেও চলতি বছরের ৩০ জুলাই টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে পানির নিচে তলিয়ে গেছে এটি। একটানা ২৮ দিন ধরে হ্রদের জলে ডুবে থাকায় পর্যটকরা হতাশ হয়ে ফিরছেন।

সেতুটি এখনো দেশী-বিদেশী ভ্রমণপিপাসুদের কাছে সমান আকর্ষণীয়। বছরে কয়েক লাখ পর্যটক শুধু এক নজর সেতুটি দেখতে রাঙামাটিতে আসেন। অনেকে প্রিয়জনের সঙ্গে ছবি তোলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেন, কেউ ভিডিও করে ইউটিউবে আপলোড করেন। অনেক পর্যটকের মতে, রাঙামাটিতে ঘুরতে এসে ঝুলন্ত সেতু না দেখলে ভ্রমণটাই অপূর্ণ থেকে যায়।

কিন্তু প্রতি বর্ষা মৌসুমে উজান থেকে পাহাড়ি ঢল নামলে কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা বেড়ে সেতুটি তলিয়ে যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, হ্রদ সৃষ্টির পর থেকে উজান থেকে নেমে আসা পলিমাটি কাপ্তাই হ্রদের তলদেশ ভরাট করে ফেলছে। নিয়মিত ড্রেজিং না হওয়ায় পানি ধারণ ক্ষমতা কমে গিয়ে এখন প্রতিবছর বর্ষায় রাঙামাটির এই প্রতীক পানিতে ডুবে যায়। এর প্রভাব পড়ছে হ্রদের উজান এলাকার বসতভিটাতেও।

২০২৪ সালের মে মাসে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাপ্তাই হ্রদ ড্রেজিংয়ের জন্য প্রায় ৯৭৭ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রণয়ন করেছিল। একনেক সভায় উত্থাপনের আগেই সরকারের পতনের কারণে প্রকল্পটি থেমে যায়। বর্তমান সরকারের আমলে এর কোনো অগ্রগতি হয়নি।

কাপ্তাই হ্রদ ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব জেলা প্রশাসকের হলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড পানি সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করে। হ্রদের মৎস্য সম্পদ রক্ষা করে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন করে কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র। কিন্তু প্রতীকী এই সেতুর স্থায়ী সমাধান নিয়ে এখনো কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখা যায়নি।

পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সামান্য সংস্কারেই সমস্যার সমাধান সম্ভব। সেতুটি কিছুটা উঁচু করে নতুনভাবে নির্মাণ করা হলে পানির নিচে ডোবার ঝুঁকি থাকবে না, বরং দীর্ঘমেয়াদে রাজস্ব আয়ও বাড়বে।

রাজশাহী থেকে আসা পর্যটক মাসুদ রানা বলেন, ‘পরিবার নিয়ে এত দূর থেকে এসেছি। কিন্তু এসে দেখি স্বপ্নের ঝুলন্ত সেতু পানির নিচে। বউ-বাচ্চাদের নিয়ে সেতুর উপর হাঁটার আশা অপূর্ণ থেকে গেল।’ 

তাঁর স্ত্রী রুবিনা বেগম বলেন, ‘আনন্দ নিয়ে এসেছিলাম, কিন্তু হতাশ হয়ে ফিরতে হচ্ছে।’

একই জেলার পর্যটক রাহুল বলেন, ‘সেতু ডুবে যাওয়ায় ছবি তুলতে পারলাম না, শুধু নৌকায় ঘুরে সময় কাটালাম।’

রাঙামাটি পর্যটন ঘাটের ম্যানেজার ফখরুল আলম বলেন, ‘সেতুটি ডুবে গেলে পর্যটকরা হতাশ হয়ে ফিরে যান, ব্যবসাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সারা বছর পর্যটক টানতে হলে এখনই সংস্কার জরুরি।’

পর্যটন করপোরেশনের ম্যানেজার আলোক বিকাশ চাকমা জানান, ‘আমরা উন্নয়ন বোর্ডকে চিঠি দিয়েছি। আধুনিক নতুন ঝুলন্ত সেতু নির্মাণ করা গেলে পর্যটনে নতুন প্রাণ সঞ্চার হবে।’

রাঙামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কৃষিবিদ কাজল তালুকদার বলেন, ‘সেতুটি দীর্ঘদিন ধরে ডুবে থাকায় আমাদেরও খারাপ লাগে। বিষয়টি পার্বত্য উপদেষ্টাকে জানানো হবে, প্রয়োজনে মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে আলোচনা তোলা হবে।’

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে পর্যটন শিল্পের বড় ক্ষতি হবে। কারণ রাঙামাটির প্রতীকী ঝুলন্ত সেতুর সঙ্গে জড়িয়ে আছে জেলার অর্থনীতি, সংস্কৃতি এবং পরিচয়ের গল্প।

মতামত লিখুন:
আরও পড়ুন 
নির্বাচিত সংবাদ
জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের ১৩ জনের নামে মামলা
জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের ১৩ জনের নামে মামলা
দুর্নীতিবাজদের নির্বাচনে মনোনয়ন না দেওয়ার আহ্বান দুদক চেয়ারম্যানের
দুর্নীতিবাজদের নির্বাচনে মনোনয়ন না দেওয়ার আহ্বান দুদক চেয়ারম্যানের
সরকার ভোজ্যতেলের দাম বাড়ায়নি: বাণিজ্য উপদেষ্টা
সরকার ভোজ্যতেলের দাম বাড়ায়নি: বাণিজ্য উপদেষ্টা
স্বত্ব © ২০২৫ দেশ বার্তা | সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী তোফায়েল আহমদ।
https://thedailydeshbarta.com/ad/1756793725_Self-3.jpg
https://thedailydeshbarta.com/ad/1756793740_Self-4.jpg