ই-পেপার |  ঢাকা, বাংলাদেশ  |  মঙ্গলবার | ১৪ অক্টোবর ২০২৫ | ২৯ আশ্বিন ১৪৩২ 
https://thedailydeshbarta.com/ad/1756793693_Self-1.jpg
https://thedailydeshbarta.com/ad/1756793710_Self-2.jpg

সর্বশেষ আপডেট: সোমবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২৫, ২৩:২৮
চলমান বার্তা:
গাইবান্ধার অন্তরঙ্গ থিয়েটারের দেড়যুগ পূর্তি উৎসব
গাইবান্ধা প্রতিনিধি
প্রকাশ: সোমবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২৫, ১৪:৪৩  (ভিজিটর : )

গাইবান্ধা নাট্য ও সাংস্কৃতিক সংস্থার (গানাসাস) প্রাঙ্গণজুড়ে ১০ অক্টোবর বিকেল থেকে শুরু হয় নাট্য ও সংস্কৃতির প্রাণময় উৎসব। রঙিন ব্যানার-ফেস্টুন, আলোকসজ্জা ও দর্শকের উচ্ছ্বাসে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয় সেখানে। আয়োজনটির পেছনে ছিলেন স্থানীয় নাট্যদল অন্তরঙ্গ থিয়েটার, যারা তাদের ১৮ বছরের পথচলার স্মারক উপলক্ষে আয়োজন করে তিন দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক উৎসবের।

দীর্ঘ দেড়যুগের নাট্যযাত্রার স্মৃতি ফিরে আসে দলটির প্রকাশিত স্মরণিকায়। ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে অন্তরঙ্গ থিয়েটার মঞ্চস্থ করেছে ২০টি মঞ্চনাটক, ১১টি পথনাটক এবং ৮টি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ‘প্রেমের মরা জলে ডোবে না’, ‘শিয়ালু পীরের মাজার’, ‘রক্তভেজা পতাকা’, ‘ভালোবাসার লাল গোলাপ’, ‘স্বাবলম্বী’, ‘হেডমাস্টার বাবু কুছু বলে নাই’, ‘ঈশ্বরের সন্তান নয় অভিশাপ’ ও ‘বাল্যবিয়ে’— এসব নাটক শুধু স্থানীয় মঞ্চেই নয়, গাইবান্ধার নাট্যরসিকদের মনেও স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছে।

উৎসবের সূচনায় কোনো আড়ম্বর নয়, বরং নাটকের মধ্য দিয়েই নিজেদের অর্জন উদযাপন করেছে দলটি। বিকেলে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার পর উদ্বোধন হয় প্রথম দিনের অনুষ্ঠান ‘স্বপ্নের সিঁড়িতে আমরা’। উদ্বোধনী আসরে নাট্যকার, অভিনেতা ও নির্দেশক আকতারুজ্জামান ফারুকী, শাহ আলম বাবলু, শিরিন আকতার, এবং অভিনেতা-সংগঠক সাজ্জাদ জাহীর নাজিম ও স্বজন খন্দকার-কে গুণিজন সম্মাননা প্রদান করা হয়।

১১ অক্টোবর দ্বিতীয় দিনে মঞ্চস্থ হয় যাত্রাপালা ‘তিনমাত্রা’— রচনা ও নির্দেশনায় দলটির সভাপতি সাজু সরকার। যাত্রার ঐতিহ্য ও সমকালীন বাস্তবতার মিশেলে নির্মিত নাটকটি দর্শকদের দেয় নতুন এক অভিজ্ঞতা।

১২ অক্টোবর তৃতীয় দিনে মঞ্চে ওঠে ‘পাথর সময়’, যার রচনা ও নির্দেশনাও সাজু সরকারের। সুচিন্তিত মঞ্চসজ্জা, আলোক পরিকল্পনা, পোশাক, সংগীত ও অভিনয়ে প্রতিটি অংশেই প্রতিফলিত হয় দলটির শিল্পনৈপুণ্য। সংলাপের দৃঢ়তা ও নাটকের গতি দর্শকদের মুগ্ধ করে রাখে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। করতালির ঝড়ে যেন মাপা যায় অন্তরঙ্গ থিয়েটারের ১৮ বছরের সাফল্য।

উৎসব শেষে ১৩ ও ১৪ অক্টোবর সংগঠনটি গাইবান্ধা সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করবে— যা নাট্যচর্চার পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতারও প্রতিফলন।

অন্তরঙ্গ থিয়েটারের সভাপতি সাজু সরকার বলেন, মুক্তচিন্তা ও সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার লক্ষ্য নিয়ে ১৮ বছর আগে আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল। নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়েও আমরা চেষ্টা করেছি দর্শকদের নতুন কিছু উপহার দিতে। বাংলাদেশের নাট্যচর্চায় অন্তরঙ্গ এখন এক ছোট অথচ দৃঢ় অবস্থান তৈরি করেছে— এটাই আমাদের প্রাপ্তি।

তার কথায় যেমন উঠে আসে সংগ্রামের গল্প, তেমনি বোঝা যায় এক প্রজন্মের সাংস্কৃতিক দায়বদ্ধতা। সমাজের অসংগতি, অন্যায়, বাল্যবিয়ে কিংবা কুসংস্কারের বিরুদ্ধে নাটকের মাধ্যমে অন্তরঙ্গ থিয়েটারের অবস্থান সবসময় স্পষ্ট। মঞ্চনাটক ও পথনাটক উভয় ধারায় দলটি ধারাবাহিকভাবে সমাজসচেতন ও মানবিক বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে।

গাইবান্ধা, উত্তরাঞ্চলের একটি ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক জেলা। রাজধানীকেন্দ্রিক নাট্যচর্চার বাইরে এই প্রান্তিক জনপদে দীর্ঘদিন ধরে নাটকের আলো জ্বালিয়ে রাখছে অন্তরঙ্গ থিয়েটার। স্থানীয় শিল্পীদের মেধা, শ্রম ও আবেগে গড়া এই দলটি জেলা পর্যায়ের নাট্য আন্দোলনে নতুন প্রাণ সঞ্চার করেছে। দলটির হাত ধরে গাইবান্ধার অনেক তরুণ এখন জাতীয় নাট্যদলে কাজ করছেন, কেউ কেউ নাট্য নির্দেশনা ও পাঠে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন।

নাটকের পাশাপাশি গান, আবৃত্তি, সংগীত নাট্য ও সামাজিক উদ্যোগেও দলটি সক্রিয়। তবে জেলা শহরে থিয়েটার চর্চা সহজ নয়— পেশাদার মঞ্চ, পর্যাপ্ত আলোকসজ্জা, প্রযুক্তিগত সহায়তা ও অর্থসংকট সবই প্রতিদিনের চ্যালেঞ্জ। তবু একাগ্রতা ও ভালোবাসার জোরে টিকে আছে দলটি। সদস্যরা কেউ শিক্ষক, কেউ ছাত্র বা ব্যবসায়ী— তবু মঞ্চই তাঁদের নেশা ও নিত্য সাধনা। প্রতিটি নাটকের পেছনে থাকে কয়েক মাসের প্রস্তুতি, মহড়া, পোশাক ও মঞ্চ নকশা তৈরির শ্রম। সেই শ্রমের ফসলেই গাইবান্ধায় গড়ে উঠেছে নতুন প্রজন্মের সাংস্কৃতিক চেতনা।

তিন দিনের উৎসবে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গাইবান্ধা আদর্শ কলেজের অধ্যক্ষ জার্জিস কাদের সবুজ, আসাদুজ্জামান গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মনিরুল হক, এএইচএম মনোয়ার হোসেন লাবলু, এটিএম মমতাজুল করিম, শাহানা ইয়াসমিন লাকী, অ্যাড. একেএম হানিফ বেলাল, মো. শামীম প্রামাণিক বাদল, মো. জাহাঙ্গীর কবীর, আলমগীর কবীর বাদল ও হেকিম মো. শামীম মিয়াসহ স্থানীয় সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিশিষ্টজনেরা। তাঁদের বক্তব্যে উঠে আসে গাইবান্ধার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ধরে রাখার আহ্বান এবং অন্তরঙ্গ থিয়েটারের প্রতি কৃতজ্ঞতা।

দর্শকরাও বলেন, এখনকার প্রজন্মকে যদি মঞ্চের মানবিক গল্পের সঙ্গে যুক্ত করা যায়, সমাজ আরও সচেতন হবে।

১৮ বছরের পথচলায় অন্তরঙ্গ থিয়েটার প্রমাণ করেছে— নাটক শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়, এটি সামাজিক পরিবর্তনের শক্তিশালী হাতিয়ার। নাটকের আলোয় গাইবান্ধার তরুণেরা যেমন বেড়ে উঠছে, তেমনি তৈরি হচ্ছে নতুন সাংস্কৃতিক চেতনার মঞ্চ। অন্তরঙ্গের এই দীর্ঘ যাত্রা তাই শুধু একটি সংগঠনের ইতিহাস নয়— এটি প্রমাণ, প্রান্তিক জনপদেও শিল্পচর্চা টিকে থাকে, যদি থাকে ভালোবাসা, অঙ্গীকার ও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা।

মতামত লিখুন:
আরও পড়ুন 
নির্বাচিত সংবাদ
ইনোভিশনের জরিপে ৬ বিভাগে এগিয়ে বিএনপি
ইনোভিশনের জরিপে ৬ বিভাগে এগিয়ে বিএনপি
ডেঙ্গুতে আরও ৩ জনের মৃত্যু
ডেঙ্গুতে আরও ৩ জনের মৃত্যু
‘আরেকটি ১/১১-এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ফিরলে কারও রক্ষা হবে না’
‘আরেকটি ১/১১-এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ফিরলে কারও রক্ষা হবে না’
অর্থনীতিতে নোবেল পেলেন ৩ অধ্যাপক
অর্থনীতিতে নোবেল পেলেন ৩ অধ্যাপক
ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবন সাময়িকভাবে ‌‘কারাগার’ ঘোষণা
ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবন সাময়িকভাবে ‌‘কারাগার’ ঘোষণা
স্বত্ব © ২০২৫ দেশ বার্তা | সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী তোফায়েল আহমদ।
https://thedailydeshbarta.com/ad/1756793725_Self-3.jpg
https://thedailydeshbarta.com/ad/1756793740_Self-4.jpg