চলমান বার্তা: |
বিশাখাপত্তমের ২২ গজে টস জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। লক্ষ্য ছিল একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক স্কোর গড়া। ওপেনিং জুটিতে দেখেশুনে, সাবধানে শুরু করেন রুবাইয়া হায়দার ঝিলিক ও ফারজানা হক। রান রেট কিছুটা কম থাকলেও লম্বা সময় পর উদ্বোধনী জুটিতে আসে ফিফটি রানের জুটি, যা দলকে এনে দেয় এক মজবুত ভিত্তি। ঝিলিক ২৫ রান করে ফিরলেও, ফারজানা ৭৬ বলে ৩০ রানের একটি ধৈর্যশীল ইনিংস খেলেন।
এরপর মঞ্চে আসেন শারমিন আক্তার। তিনে নেমে তিনি আরও একবার নিজের ব্যাটের ঝলক দেখান। অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতির (৩২ রান) সঙ্গে মিলে তিনি তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৭৭ রানের একটি গুরুত্বপূর্ণ পার্টনারশিপ গড়েন। জ্যোতি ফিরলেও শারমিন ছিলেন অবিচল। ৭৪ বলে নিজের ফিফটি পূর্ণ করে তিনি দলের বড় সংগ্রহের পথ মসৃণ করেন।
তবে ইনিংসের আসল রং লাগে মিডল অর্ডারে। ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন পেয়ে পাঁচে নামা স্বর্ণা আক্তার যেন অন্য মেজাজে ছিলেন। মাত্র ৩৪ বলে তিনি স্পর্শ করেন ব্যক্তিগত ফিফটি, যা বাংলাদেশের নারী ওয়ানডে ইতিহাসে দ্রুততম ফিফটির নতুন রেকর্ড। তার ব্যাট থেকে আসে একের পর এক ঝড়ো শট। শেষদিকে রিতু মণিও ৮ বলে অপরাজিত ১৯ রানের ক্যামিও খেললে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ তোলে ২৩২ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর।
প্রোটিয়াদের লড়াই, ম্যাচ ঘুরিয়ে দিল মিডল অর্ডারের জুটি২৩৩ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রোটিয়ারা শুরুতেই ধাক্কা খায়। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই অভিজ্ঞ স্পিনার নাহিদা আক্তার প্রথম বলেই তুলে নেন তাজমিন ব্রিটস-এর উইকেট। ৩ রানে প্রথম উইকেট হারানোর পর প্রোটিয়ারা ঘুরে দাঁড়ায়। লরা উলভার্ট ৩১ রান করে রান আউট হলে দ্রুতই আরও তিন উইকেট হারায় তারা।
মাত্র ৭৮ রানে ৫ উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশ তখন ম্যাচের লাগাম শক্ত হাতে ধরে রেখেছে। সেমিফাইনালের স্বপ্ন তখন ড্রেসিংরুমের প্রায় প্রত্যেকের চোখে!
কিন্তু ক্রিকেট তো অনিশ্চয়তার খেলা। এইখান থেকেই শুরু হয় দক্ষিণ আফ্রিকার প্রত্যাবর্তনের গল্প। ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে মারিয়ানা কাপ এবং চার্লি ট্রায়ন মিলে গড়েন ৮৫ রানের এক অসাধারণ জুটি। কাপ ৫৬ রান করে আউট হলেও ট্রায়ন এক প্রান্ত ধরে রেখে নিজের দায়িত্ব পালন করেন। ৬২ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলে তিনি দলকে জয়ের একেবারে কাছাকাছি নিয়ে আসেন।
শেষ ওভারের রুদ্ধশ্বাস নাটক ও দুর্ভাগ্যজনক পরাজয়ম্যাচের ভাগ্য তখন পেন্ডুলামের মতো দুলছে। শেষ ৬ বলে দক্ষিণ আফ্রিকার জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল মাত্র ৮ রান। বল হাতে ছিলেন সেই নাহিদা আক্তার, যিনি ইনিংসের শুরুতে দলকে প্রথম ব্রেকথ্রু এনে দিয়েছিলেন। ক্রিকেট ভক্তদের হৃদস্পন্দন তখন চরম পর্যায়ে।
নাহিদার করা প্রথম বলেই চার মেরে দেন ডে ক্লার্ক, যিনি তখন ছিলেন দুর্দান্ত ফর্মে। সমীকরণ নেমে আসে ৫ বলে ৪ রানে। পরের বলটি ডট হলেও, তৃতীয় বলেই বিশাল এক ছক্কা হাঁকিয়ে ৩ বল হাতে রেখেই দক্ষিণ আফ্রিকার জয় নিশ্চিত করেন ক্লার্ক। ২৯ বলে ৩৭ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে তিনিই হন প্রোটিয়াদের জয়ের নায়ক। ৭ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
হারানো নিয়ন্ত্রণ ও ক্লার্কের ঝলকশেষ ওভারের এই ৩ উইকেটের হারে বাংলাদেশের বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের সমীকরণ অনেকটাই কঠিন হয়ে গেল। এই দুর্ভাগ্যজনক হারের পেছনে কিছু কারণ চিহ্নিত করা যায়:
১. মিডল অর্ডারে নিয়ন্ত্রণ হারানো: ৭৮ রানে ৫ উইকেট তুলে নেওয়ার পর বাংলাদেশ ম্যাচের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে ছিল। কিন্তু মারিয়ানা কাপ এবং চার্লি ট্রায়নের ৮৫ রানের জুটি ভাঙতে না পারাই ছিল ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট। এই জুটিই ম্যাচের গতিপথ পাল্টে দেয়।
২. বোলিং-এ দুর্বলতা: ডেথ ওভারে বাংলাদেশের বোলিং প্রত্যাশিত ধার ধরে রাখতে পারেনি। বিশেষ করে শেষদিকে ডে ক্লার্কের ২৯ বলে ৩৭ রানের বিধ্বংসী ইনিংস এবং শেষ ওভারের দ্রুত জয় ছিনিয়ে নেওয়া বাংলাদেশের বোলারদের চাপ সামলানোর অক্ষমতাকে তুলে ধরে।
তবে, স্বর্ণা আক্তারের দ্রুততম ফিফটি এবং শারমিনের দায়িত্বশীল ব্যাটিং ছিল বাংলাদেশের জন্য উজ্জ্বল দিক। এত কাছ থেকে হেরে যাওয়া নিঃসন্দেহে হতাশার, কিন্তু এই পারফরম্যান্স বিশ্বকাপে নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ হিসেবেও বিবেচিত হবে।
দেশবার্তা/এসএ/এসবি