বদলে যাওয়া বাঘের হুংকার
এশিয়া কাপের পর বাংলাদেশ দল যেন এক নতুন উদ্যমে খেলছে। আফগানিস্তানের মতো শক্তিশালী টি-টোয়েন্টি দলের বিরুদ্ধে তাদের তথাকথিত 'হোম গ্রাউন্ড' শারজায় সিরিজ খেলতে নামাটা ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু প্রথম দুই ম্যাচ জিতে বাংলাদেশ এরই মধ্যে সিরিজ নিজেদের করে নিয়েছে। আজকে এই তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে জাকের আলীর দল আফগানদের ৩-০ ব্যবধানে ধবলধোলাই করার লক্ষ্যে মাঠে নামে। এই ম্যাচ জিতলে টি-টোয়েন্টিতে প্রথমবার আফগানদের বিরুদ্ধে টানা চারটি ম্যাচ জয়ের নজির গড়বে বাংলাদেশ, এমন লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নেমেছিল টাইগার বাহিনী। ছিল। প্রথম ওভারে শরীফুল ইসলামকে পিটিয়ে ১১ রান তুলে নেয় তারা। তবে এরপরই বাংলাদেশের বোলাররা দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায়।
তৃতীয় ওভারে শরীফুল বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন। তিনি ইব্রাহিম জাদরানকে (৭ রান) আউট করেন।
পরের ওভারেই রহমানউল্লাহ গুরবাজকে (১২ রান) ফেরান নাসুম আহমেদ।
পাওয়ার প্লের শেষ বলে অনভিজ্ঞ ওয়াফিউল্লাহ তারাখিলকে (১১ রান) বোল্ড করেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।
আফগানিস্তানের হয়ে শুধু সেদিকউল্লাহ আতাল (২৮ রান) এবং শেষে দারবিশ রাসুলি (৩২ রান) ও মুজিব উর রেহমান (২৩* রান) কিছুটা প্রতিরোধ গড়তে পারেন।
বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সাইফউদ্দিন ১৫ রানে ৩টি উইকেট নেন। নাসুম আহমেদ ও তানজিম হাসান—দুজনেই পান ২টি করে উইকেট।
নির্ধারিত ২০ ওভারে আফগানিস্তান দল ৯ উইকেট হারিয়ে ১৪৩ রান সংগ্রহ করে। বাংলাদেশের লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৪৪ রান।
বাংলাদেশের ইনিংস: সাইফ হাসানের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে সহজ জয়
১৪৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশের শুরুটা হয় বেশ সতর্ক পদক্ষেপ। ওপেনার পারভেজ হোসেন ও তানজিদ হাসান ইনিংস শুরু করেন।
প্রথম ওভারেই মুজিব উর রেহমান একটি মেডেন দেন।
পঞ্চম ওভারে পারভেজ হোসেন (১৪ রান) আউট হওয়ার পর মাঠে নামেন সাইফ হাসান।
সাইফ হাসানের ব্যাটিংয়ে ম্যাচের মোড় দ্রুত ঘুরে যায়। তিনি শুরু থেকেই আফগান বোলারদের উপর চড়াও হন।
তানজিদ হাসান (৩৩ রান) তাঁকে যোগ্য সঙ্গ দেন। তাঁরা দুজনে দলের জয়কে সহজ করে তোলেন।
সাইফ হাসান দুর্দান্ত ব্যাটিং করে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে তাঁর চতুর্থ ফিফটি পূরণ করেন। একটি ৯৫ মিটার লম্বা ছক্কা মেরে তিনি গ্যালারির ছাদে বল পাঠান!
মাঝখানে জাকের আলী ও শামীম হোসেন দ্রুত ফিরলেও তা দলের জয়ে কোনো বাধা সৃষ্টি করেনি।
শেষ দিকে নুরুল হাসান ও সাইফ হাসান মিলে দলের জয় নিশ্চিত করেন।
সাইফ হাসানের ছক্কা এবং নুরুল হাসানের ছক্কায় ২ ওভার বাকি থাকতেই বাংলাদেশ ৬ উইকেটে জয় তুলে নেয়। সাইফ হাসান অপরাজিত থাকেন ৫৭ রানে।
সাইফ হাসান এই ম্যাচেও তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে ৭টি ছক্কা এবং ২টি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে দর্শকদেরকে উল্লসিত করে তুলেন। বাংলাদেশ ছক্কা মারতে পারে না- এই ধরনের অপবাদ থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করার লক্ষ্যেই যেন বদলে যাওয়া সাইফ হাসানের আত্মপ্রকাশ।
আফগানদের 'অহংকার' ভাঙা বাংলাওয়াশ
এই জয়ের ফলে বাংলাদেশ শুধু সিরিজই জেতেনি, বরং আফগানিস্তানকে ৩-০ ব্যবধানে ধবলধোলাই করল। এটি একটি 'বাংলাওয়াশ'। এর মাধ্যমে টি-টোয়েন্টিতে প্রথমবার আফগানদের হোয়াইটওয়াশ করল বাংলাদেশ, তাও তাদের নিজেদের পছন্দের ভেন্যুতে।
এই সিরিজ জয় একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেয়। ২০১৮ সালে আফগানিস্তানের কাছে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার প্রতিশোধ নিল বাংলাদেশ। এর সঙ্গে টানা চারটি টি-টোয়েন্টিতে আফগানিস্তানকে হারিয়ে তাদের 'অহংকার' বা একতরফাভাবে নিজেদের টি-টোয়েন্টি পরাশক্তি ভাবার ধারণাটিকে ভেঙে দিলো জাকের আলীর নেতৃত্বাধীন এই দলটি। তরুণ ও অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের সম্মিলিত পারফরম্যান্স বাংলাদেশের ক্রিকেটে এক নতুন সম্ভাবনার জন্ম দিলো।
দেশবার্তা/এসএ/এসবি