চলমান বার্তা: |
অপেক্ষা ছিল সিরিজে সমতা ফেরানোর। কিন্তু সেই অপেক্ষার পালা শেষ হলো আফগানিস্তানের সিরিজ জয়ে। টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের দারুণ দাপটের পর ওয়ানডেতে বাংলাদেশের এমন মুখ থুবড়ে পড়া সত্যিই হতাশাজনক। আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশ আফগানিস্তানের কাছে হেরেছে ৮১ রানের ব্যবধানে। প্রথম ওয়ানডেতেও ৫ উইকেটে হারের পর এই পরাজয়ে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই সিরিজ খোয়াল টাইগাররা।
টি-টোয়েন্টিতে দাপট, ওয়ানডেতে মুখ থুবড়ে পড়া
টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ সাম্প্রতিক সময়ে দারুণ ক্রিকেট খেলছিল। বিশেষত, ঘরের মাঠে বড় দলগুলোর বিপক্ষেও সিরিজ জিতেছে তারা। কিন্তু ক্রিকেটের এই ভিন্ন ফরম্যাটে, অর্থাৎ ওয়ানডেতে এসে যেন সব ছন্দ হারিয়ে ফেলছে। টি-টোয়েন্টির সাফল্যের পর ওয়ানডে সিরিজে এমন শোচনীয় হার ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য অপ্রত্যাশিত। আফগানিস্তানের মতো দলের বিপক্ষে তাদের "হোম ভেন্যু" আবুধাবিতে টাইগারদের এই পারফরম্যান্স প্রশ্ন তুলেছে ব্যাটিং গভীরতা ও মানসিকতা নিয়ে।
আফগানিস্তানের ইনিংস: ইব্রাহিম জাদরানের একার লড়াই
টস জিতে ব্যাটিং বেছে নেয় আফগানিস্তান। তবে বাংলাদেশের বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে শুরুতেই উইকেট হারায় তারা। মাত্র ১৮ রানে রহমানউল্লাহ গুরবাজকে ফেরান তানজিম হাসান। এরপর ৩৮ রানে ফেরেন সেদিকউল্লাহ আতাল। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারালেও এক প্রান্ত আগলে রাখেন ইব্রাহিম জাদরান। তিনি একাই ১৪০ বলে ৯৫ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন। অল্পের জন্য সেঞ্চুরি হাতছাড়া হলেও তাঁর ইনিংসই আফগানদের সম্মানজনক পুঁজি এনে দেয়। শেষদিকে মোহাম্মদ নবী ও আল্লাহ মোহাম্মদ গজনফর ২২ রান করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ৪৪.৫ ওভারে আফগানিস্তান অলআউট হয় মাত্র ১৯০ রানে। বাংলাদেশের পক্ষে অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ ৩টি এবং তানজিম হাসান ও রিশাদ হোসেন ২টি করে উইকেট নেন।
বাংলাদেশের ইনিংস: ব্যাটিং ব্যর্থতার মহাকাব্য
জয়ের জন্য বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্য ছিল মাত্র ১৯১ রানের। কিন্তু এই ছোট লক্ষ্য তাড়া করতে গিয়েও চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ের মুখে পড়ে তারা। শুরুটা হয়েছিল আরও ভয়াবহ। প্রথম ওভারেই তানজিদ হাসান ফেরেন। এরপর নাজমুল হোসেন রানআউটের শিকার হন। ৪০ রানে ৩ উইকেট হারানো দলটির জন্য এটি ছিল আরেকটি ব্যর্থতার মহাকাব্য।
অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি। তিনি এলবিডব্লু হন আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের বলে। তাওহিদ হৃদয় ও জাকের আলী কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন। তবে ২৯ রানের জুটি ভাঙার পর তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ। হৃদয় ২৪ রান করে রশিদ খানের বলে বোল্ড হন। এরপর রশিদ খানের স্পিন জাদুতে কুপোকাত হয় বাংলাদেশের মিডল ও লোয়ার অর্ডার। রশিদ টানা দুই বলে নুরুল হাসান ও তানজিম হাসানকে ফেরান। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ ২৮ ওভারে মাত্র ১০৯ রানে অলআউট হয়ে যায়। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ২৪ রান আসে তাওহিদ হৃদয়ের ব্যাট থেকে। আফগানিস্তানের হয়ে রশিদ খান ৮ ওভারে মাত্র ১৪ রান দিয়ে ৪টি উইকেট শিকার করেন।
শোচনীয় পরাজয়ের কারণ বিশ্লেষণ
ওয়ানডেতে বাংলাদেশের এমন শোচনীয় পরাজয়ের পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে:
দুর্বল টপ-অর্ডার ব্যাটিং: ১৯১ রানের লক্ষ্যেও টপ-অর্ডার ব্যাটসম্যানরা চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। কোনো বড় জুটি গড়তে না পারাটাই ছিল মূল সমস্যা।
রশিদ খানের ঘূর্ণিজাল: আফগানিস্তানের তারকা স্পিনার রশিদ খানের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করেছে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। তাঁর ৪ উইকেট একাই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
মানসিক চাপ: প্রথম ম্যাচের হারের পর সিরিজে টিকে থাকার বাড়তি চাপ সামলাতে পারেনি দল। ছোট লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে অতিরিক্ত চাপে ভেঙে পড়েন ব্যাটসম্যানরা।
অনিয়মিত ব্যাটিং অনুশীলন: টি-টোয়েন্টির পর ওয়ানডেতে এসে ব্যাটসম্যানরা লম্বা সময় উইকেটে থাকার ধৈর্য দেখাতে পারেননি।
এই হারে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই সিরিজ হার নিশ্চিত হলো বাংলাদেশের। ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগে এমন পারফরম্যান্স দলের জন্য অশনি সংকেত।
দেশ বার্তা/এসএ/এসবি