গতকাল প্রথম টি–টোয়েন্টিতে ৪ উইকেটে জয়ের পর দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ নেমেছিল সিরিজ জয়ের লক্ষ্য নিয়ে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি–টোয়েন্টি সিরিজে এক ম্যাচ হাতে রেখেই ট্রফি নিশ্চিত করার সুযোগ এসেছিল অধিনায়ক জাকের আলীর দলের সামনে। অন্যদিকে, আফগানিস্তান চেয়েছিল সিরিজে সমতা ফেরাতে। তবে শেষ হাসি হাসলো বাংলাদেশই। শেষ বলে নয়, পাঁচ বল হাতে রেখেই ২ উইকেটের রোমাঞ্চকর জয় ছিনিয়ে নিয়ে সিরিজ নিজেদের করে নিল বাংলাদেশ। বিশেষ করে ম্যাচের শুরুতে এবং শেষে শরীফুল ইসলামের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স এই জয়ে রেখেছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
আফগানিস্তানের ইনিংস: মন্থর শুরু, মাঝারি সংগ্রহ
টস জিতে বাংলাদেশ অধিনায়ক জাকের আলী প্রথমে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন। একাদশে দুটি পরিবর্তন আনা হয় — তাসকিন আহমেদ ও তানজিম হাসানের বদলে সুযোগ পান মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও শরীফুল ইসলাম। বাংলাদেশের বোলাররা আফগানদের ইনিংসের শুরু থেকেই লাগাম টেনে ধরেন।
বোলিংয়ে দাপট: বাঁহাতি পেসার শরীফুল ইসলাম তাঁর প্রথম তিন ওভারে মাত্র ৯ রান দিয়ে আফগান ব্যাটসম্যানদের বড় শট খেলা থেকে বিরত রাখেন। যদিও পাওয়ার প্লেতে কোনো উইকেট পায়নি বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ৬ ওভারে তুলতে পারে মাত্র ৩৫ রান।
উইকেট পতন: অষ্টম ওভারে এসে প্রথম উইকেটের দেখা পায় বাংলাদেশ। রিশাদ হোসেনের বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সেদিকউল্লাহ আতাল (২৩ রান), তবে তার আগে টানা দুই বলে তিনি ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন। এরপর নাসুম আহমেদের শিকার হন ইবরাহিম জাদরান (৩৮ রান), যিনি দলের সর্বোচ্চ স্কোরার।
শেষের দিকে আঘাত: আফগানিস্তানের মিডল অর্ডারে ধাক্কা দেন রিশাদ হোসেন ও নাসুম আহমেদ। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্রেকথ্রু আসে ১৭তম ওভারে, যখন শরীফুল ইসলাম দুর্দান্ত এক ইয়র্কারে রহমানউল্লাহ গুরবাজকে (৩০ রান) বোল্ড করে দেন। শরীফুল শেষ পর্যন্ত ৪ ওভারে মাত্র ১৩ রান দিয়ে নেন ১ উইকেট, যা একটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ছিল অত্যন্ত কার্যকরী।
ফলাফল: নির্ধারিত ২০ ওভারে আফগানিস্তান থামে ৫ উইকেটে ১৪৭ রানে, ফলে বাংলাদেশের জয়ের লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৪৮ রান। নাসুম আহমেদ ২/২৫ এবং রিশাদ হোসেন ২/৪৫ নিয়ে সফলতম বোলার ছিলেন।
বাংলাদেশের ইনিংস: টপ অর্ডারের ব্যর্থতা, মিডল অর্ডারের প্রতিরোধ
১৪৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশের শুরুটা ছিল বিপর্যয়কর।
টপ অর্ডারের ধস: ২৪ রানের মধ্যেই বাংলাদেশ হারায় প্রথম তিন ব্যাটসম্যানকে। তানজিদ হাসান (২), পারভেজ হোসেন (২) এবং সাইফ হাসান (৬) দ্রুত আউট হয়ে গেলে দল পড়ে যায় গভীর সঙ্কটে।
শামীম-জাকেরের প্রতিরোধ: এই কঠিন পরিস্থিতিতে দলের হাল ধরেন শামীম হোসেন ও অধিনায়ক জাকের আলী। চতুর্থ উইকেটে তারা গড়েন ৫৬ রানের মূল্যবান জুটি। জাকের আলী ২৫ বলে ৩২ এবং শামীম হোসেন ২২ বলে ৩৩ রান করে দলকে জয়ের পথে নিয়ে যান। দু'জনের ইনিংসেই ছিল ২টি করে চার ও ছক্কা।
আবার বিপদ: শামীম ও জাকের আউট হওয়ার পর আবারও চাপে পড়ে বাংলাদেশ। ১৮তম ওভারে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও রিশাদ হোসেনের বিদায়ে স্কোর দাঁড়ায় ১৮ ওভারে ১২৯/৮। শেষ ১২ বলে জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ১৯ রান।
নুরুল-শরীফুলের ক্যামিও: এমন পরিস্থিতিতে দলের ত্রাতা হয়ে আসেন অভিজ্ঞ নুরুল হাসান ও ম্যাচের নায়ক শরীফুল ইসলাম। ১৯তম ওভারে নূর আহমেদের ওপর চড়াও হন নুরুল, প্রথম বলেই মারেন ছক্কা! এই ওভার থেকে আসে ১৭ রান, যা ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। শেষ ওভারে জয়ের জন্য দরকার ছিল মাত্র ২ রান। আজমতউল্লাহর প্রথম বলটিই লং অন দিয়ে বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে দেন শরীফুল ইসলাম।
ফলাফল: বাংলাদেশ ৮ উইকেট হারিয়ে ৫ বল হাতে রেখে লক্ষ্যে পৌঁছে যায়। নুরুল হাসান ৩১ রানে অপরাজিত থাকেন এবং শরীফুল ইসলাম মাত্র ৬ বলে ১১ রানের ম্যাচজয়ী ক্যামিও খেলেন।
জয়ের কারিগর কারা?
দ্বিতীয় টি–টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের এই ২ উইকেটের জয়টি ছিল সমষ্টিগত প্রচেষ্টার ফল, তবে কয়েকজনের পারফরম্যান্স ছিল বিশেষভাবে উজ্জ্বল।
শরীফুল ইসলামের ডাবল অ্যাক্ট: বোলিংয়ে ৪ ওভারে মাত্র ১৩ রান দিয়ে ১ উইকেট নিয়ে তিনি আফগানদের রানের গতি আটকে দেন। আর ব্যাটিংয়ে শেষ মুহূর্তে ৬ বলে ১১ রানের অপরাজিত ইনিংসে দলের জয় নিশ্চিত করেন। ম্যাচের সেরা পারফর্মার হিসেবে তাঁর ভূমিকাই ছিল মুখ্য।
মিডল অর্ডারের দৃঢ়তা: টপ অর্ডার ব্যর্থ হওয়ার পর শামীম হোসেন এবং জাকের আলীর ৫৬ রানের জুটি দলকে ম্যাচে টিকিয়ে রাখে।
নাসুমের কার্যকারিতা: নাসুম আহমেদ ৪ ওভারে ২৫ রান দিয়ে ২টি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট তুলে নিয়ে আফগান ইনিংসের রাশ টেনে ধরেন।
নুরুল হাসানের ফিনিশিং: চাপের মুখে ৩১ রানের দায়িত্বশীল অপরাজিত ইনিংস খেলে নুরুল হাসান দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন।
এই জয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ এক ম্যাচ হাতে রেখেই আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ ২-০ ব্যবধানে জিতে ট্রফি নিশ্চিত করেছে। এটি বাংলাদেশের জন্য একটি স্মরণীয় সিরিজ জয়।
দেশবার্তা/এসএ/এসবি