শেরপুর জেলায় সম্প্রতি জাল টাকার বিস্তার নিয়ে জনমনে দেখা দিয়েছে চরম উদ্বেগ ও আতঙ্ক। বেশ কিছুদিন ধরে বিচ্ছিন্নভাবে জাল টাকা লেনদেনের খবর শোনা গেলেও গত সপ্তাহে একের পর এক ঘটনায় বিষয়টির সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে। এতে ব্যাংক লেনদেনে জড়িত ব্যবসায়ী ও সাধারণ গ্রাহকরা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
জানা গেছে, গত রবিবার সদর উপজেলার গণইমমিনাকান্দা গ্রামের ষাটোর্ধ্ব নিরক্ষর মহিলা শাহিনা বেগম স্থানীয় উত্তরা ব্যাংকে ২ লাখ ৬৯ হাজার টাকা জমা দিতে যান। ব্যাংক কর্মকর্তারা টাকা যাচাইয়ের সময় দেখতে পান, ওই টাকাগুলোর মধ্যে ৫৩টি এক হাজার টাকার নোট জাল।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে শেরপুর সোনালী ব্যাংকে নুহূ নামে এক ব্যক্তি সরকারি চালানের ২ লাখ ৪৩ হাজার টাকা জমা দিতে গেলে, ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তার জমা দেওয়া টাকায় ২৫টি এক হাজার টাকার জাল নোট শনাক্ত করে। নুহূ জানান, তিনি ওই টাকা শেরপুর প্রধান ডাকঘর থেকে তুলেছিলেন। পরে ব্যাংক ব্যবস্থাপক ডাকঘরের কর্মকর্তার কাছে বিষয়টির ব্যাখ্যা চান।
এরও এক সপ্তাহ আগে সম্রাট নামে এক যুবক ডাচ-বাংলা ব্যাংক থেকে কার্ডের মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা তোলার পর একটি এক হাজার টাকার জাল নোট পান। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত এক সপ্তাহে অন্তত ছয়জন গ্রাহক জাল নোট পেয়েছেন, তবে কেউই এখন পর্যন্ত আইনগত পদক্ষেপ নেননি।
উত্তরা ব্যাংকের ক্যাশিয়ার মাহবুর রহমান বলেন, “বৃদ্ধা মহিলার জমা দেওয়া টাকার মধ্যে ১ হাজার টাকার ৫৩টি নোট জাল পাওয়া যায়।”
অন্যদিকে, শেরপুর ডাকঘরের পোস্টাল অফিসার মানিক মিয়া বলেন, “আমরা বিভিন্ন পক্ষের টাকা আদান-প্রদান করি। যে টাকাগুলো মহিলাকে দেওয়া হয়েছে, তা অন্য পক্ষের কাছ থেকে নেওয়া হয়। আমি যথাযথভাবে টাকা গুনে গ্রাহকের হাতে দিয়েছি।”
শেরপুর প্রধান ডাকঘরের পোস্টমাস্টার খন্দকার নূর কুতুবুল আলম বলেন, “বিষয়টি জানার পর আমরা দ্রুত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছি। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা এবং উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে।”
শেরপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি কাকন রেজা বলেন, “জাল টাকার বিষয়টি অত্যন্ত সংবেদনশীল। এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষ আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন। তাই দ্রুত তদন্ত ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।”
এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, “বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। যদিও এখনো কেউ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করেননি, তবু আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছি। ব্যাংক কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে অবহিত করা।”
শেরপুরে ক্রমবর্ধমান এই জাল টাকার বিস্তার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে। সাধারণ গ্রাহকরা এখন সতর্কতার সঙ্গে ব্যাংক লেনদেন করার আহ্বান জানিয়েছেন।