দেখার হাওর সুনামগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় হাওর। এখানে সবচেয়ে বেশি ধান উৎপাদন হয়। এখানকার জীববৈচিত্র্য ধ্বংস, পানি প্রবাহ বন্ধ ও ধান উৎপাদন বাধাগ্রস্ত না করে উপযুক্ত জায়গায় সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (সুবিপ্রবি) এর স্থায়ী ক্যাম্পাস স্থাপন করা হোক।
মঙ্গলবার দুপুরে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের আলফাত স্কয়ারে ‘হাওর ভরাট ও পরিবেশের ক্ষতি করে নয়’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এর প্রস্তাবিত স্থান পরিবর্তনের দাবিতে মানববন্ধনে এসব কথা বলেন বক্তারা।
আন্ত:উপজেলা অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক আফিন্দি’র সভাপতিত্বে ও পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের সভাপতি ফজলুল করিম সাঈদ’র সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সভাপতি জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাড. তৈয়বুর রহমান বাবুল, পরিবেশবাদী সংগঠন হাউস’র নির্বাহী পরিচালক সালেহীন চৌধুরী শুভ, জীব—বৈচিত্র্য ও পরিবেশ উন্নয়ন ফোরাম—সিলেট এর সভাপতি আবুল হোসেন, হাওর—নদী ও পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের সভাপতি মিজানুর রহমান রাসেল প্রমুখ।
মানববন্ধনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক জেলা আহ্বায়ক ও যুবশক্তি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইমনুদ্দোজা আহমদ, জেলা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক ইজাজুল হক চৌধুরী নাছিম, সুনামগঞ্জ পৌর ছাত্রদলের সদস্য সচিব মো. মুমিনূর রহমান পীর শান্ত , সুনামগঞ্জ পৌর ডিগ্রী কলেজ ছাত্রদলের আহবায়ক ইফতেখার হোসাইন যোহা, সুনামগঞ্জ পৌর ছাত্রদলের ২ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সভাপতি মুস্তাকিম রাজা, সুনামগঞ্জ পৌর ডিগ্রী কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক সালমান আহমেদ, মোসলে উদ্দিন সোহেল, সদস্য রেজুয়ান মিয়া।
আমরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, হাওর ধ্বংস করে, পানি নিষ্কাশনের পথকে বাধাগ্রস্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান নির্ধারণ করা সঠিক সিদ্ধান্ত হয়নি। যেখানে সরকারের খাস জমি আছে ও জমি ভরাট কম করলে হবে সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গা নির্বাচন করা হোক। এখানে বিশ^বিদ্যালয় হলে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে জলাবদ্ধতা ও অকাল বন্যায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যাবে। শুধু তাই নয়, মৎস্য উৎপাদন ও আবাদি জমিও ধ্বংস হবে। পরিবেশ ধ্বংসের আয়োজন অবিলম্বে বন্ধ করা হোক।
বক্তারা বলেন, আমরাও চাই আমাদের জেলায় একটি বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় থাকবে। একই সাথে পরিবেশ—প্রকৃতি—জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা চাই। বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেখানে পরিবেশ—প্রকৃতি—জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ও জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত থেকে বাঁচতে গবেষণা করছে, সেখানে আমরা পরিবেশ ধ্বংস করে বিশ্ববিদ্যালয় করছি। ছাতক, দোয়ারাবাজার, শান্তিগঞ্জ ও সদর উপজেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল নিয়ে সুনামগঞ্জের সবচেয়ে বড় হাওর হলো ‘দেখার হাওর’। এখানে বিশ্ববিদ্যালয় হলে নিশ্চিতভাবেই পরিবেশ ধ্বংস হবে। প্রকৃতি পরিবেশ রক্ষা করে সর্বসম্মতভাবে আপনারা জায়গা নির্ধারণ করুন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রস্তাবিত বা নির্ধারিত দেখার হাওরটি জেলার একটি সুবিশাল হাওর উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, এই হাওর মিঠা পানির মাছের বড় উৎস। দেখার হাওরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবিশাল ভবনাদি নির্মিত হলে হাওরের প্রাকৃতিক পরিবেশ বিনষ্ট হয়ে কৃষিজ উৎপাদন ব্যবস্থায় সাংঘাতিক বিরূপ প্রভাব পড়বে। এর ফলে ধান ও মাছ উৎপাদন উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কমবে। হাওরের কৃষি জমির চরিত্র অপরিবর্তিত রাখা ও হাওরের কোনো ক্ষতি না করা সরকারের অন্যতম লক্ষ্য, সেজন্য দেখার হাওরে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হলে সরকারের এই লক্ষ্য বাধাগ্রস্ত হবে।
প্রসঙ্গত, সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন পাস হয় ২০২০ সালের ১৮ নভেম্বর। পরবর্তী সময়ে ২০২৪ সালের ৩ নভেম্বর অস্থায়ী ক্যাম্পাসে পাঠদান শুরু হয়। প্রথম ব্যাচে ২০২৩—২৪ শিক্ষাবর্ষে রসায়ন, গণিত, পদার্থ ও কম্পিউটার বিজ্ঞান বিষয়ে ১২৮ জন এবং দ্বিতীয় ব্যাচে ১৪৩ শিক্ষার্থী ভর্তি হন। এখানে ১৭ শিক্ষক ও ২৭ জন স্টাফ রয়েছেন। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সুনামগঞ্জ সদর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরের টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটের কিছু ভবন, একটি মাদ্রাসা—কলেজসহ কিছু বাড়িঘর ভাড়া নিয়ে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম চলছে।