গেল কয়দিনে থেমে থেমে বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার নিচু জমির প্রায় ২৩ হেক্টর আমন ধান তলিয়ে গেছে। কৃষকদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন এবং কষ্টের রোপণকৃত আমন জমি পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়ছেন অনেকে।
এর আগে শ্রাবণ, ভাদ্র মাসে থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ায় রোপা আমনে রোপণে স্বস্তি পেয়েছিলেন কৃষকরা। সেই সময় বৃষ্টি হওয়ায় সেচ খরচ কম লেগেছে। কিন্তু সম্প্রতি অতিবৃষ্টি কৃষককের দুঃখ বাড়িয়েছে। এতে অনেকের রোপণকৃত জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। সামনের দিনগুলোতে আরও বৃষ্টিপাত হলে ক্ষতি বাড়বে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।
বুধবার দুপুরে সরেজমিনে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা গৌরারং ইউনিয়নে গিয়ে দেখা গেছে, আমন ধানের চাষকৃত জমি পানির নিচে তলিয়ে যাওয়া জমি ঘুরে ঘুরে দেখে কৃষকরা হা—হুতাশ করছেন। জমিতে আমন ধানের রোপণকৃত চারা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় কৃষকের এখন মাথায় হাত।
একইভাবে সদর উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়ন এবং সুরমা ইউনিয়নেও অনেক কৃষকের আমন জমিও পানির নিচে তলিয়ে গেছে বলে জানা গেছে।
গৌরারং ইউনিয়নের রাধানগর এলাকার নুরুল ইসলাম সাড়ে তিন কেয়ার জমিতে আমন ধানের চারা রোপণ করেছেন। পুরো জমিই পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, জমিতে বিনা—২২ ধানের চারা রোপণ করেছিলাম। গত তিনদিনের বৃষ্টি এবং পাহাড়ি ঢলে পুরো জমির ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। সামনের দিনগুলোতে যদি বৃষ্টি হয় তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত হবো, তবে আর বৃষ্টি না হলে ফসল তুলতে পারবো।
একই গ্রামের মো. আয়ুব আলী বলেন, আমি ১৮ শতক জমিতে বিনা—২২, ব্রি—৮৭ ও ব্রি—১০৩ ধান রোপণ করেছিলাম। সম্পূর্ণ জমি এখন পানির নিচে। জমিতে এখন হাঁটু পানি আছে। তিনি বলেন, প্রায় সাড়ে চার কেয়ার জমির মধ্যে বিনা—২২ ধান রোপণ করেছি, বাকি তিন কেয়ার জমিতে ব্রি—৮৭ ও ব্রি—১০৩ জাতের ধান রোপণ করেছি। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে ক্ষতি পুষিয়ে উঠা মুশকিল হবে।
মোহনপুর ইউনিয়নের মুরারবন্দ এলাকার আব্দুল হামিদ তিন কেয়ার জমিতে আমন ধানের চারা রোপণ করেছেন। তিনি বলেন, অতিবৃষ্টিতে ইতোমধ্যে দুই কেয়ার পানির নিচে তলিয়ে গেছে, আর এক কেয়ার জমির চারা এখনও পানির উপরে আছে। আর দুই একদিন একইভাবেই বৃষ্টি হলে যে জমিটা এখনও পানির উপরে আছে, সেই জমির চারাও তলিয়ে যাবে। ক্ষতির সীমা থাকবে না আমার।
গৌরারং ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামের আব্দুল হাই বলেন, আমি সাড়ে পাঁচ কেয়ার জমিতে আমন ধানের চারা রোপণ করেছিলাম। আট দিন ধরে টানা বৃষ্টিপাত এবং পাহাড়ি ঢলের ধাক্কায় আড়াই কেয়ার জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ ওমর ফারুক জানান, সুনামগঞ্জ জেলা হাওর অধ্যুষিত অঞ্চল। এখানে এই বছর অন্যান্য বছরের তুলনায় বৃষ্টিপাত খুবই কম হয়েছে। তবে গত তিনদিন সারা দেশের মতো সুনামগঞ্জেও অতিবৃষ্টি, ভারি বৃষ্টি এবং মাঝারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস ছিল। সেই অনুযায়ী সুনামগঞ্জে বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণে সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে নদী সংলগ্ন এলাকার আমন ধান কিছুটা নিমজ্জিত হয়েছে।
তিনি বলেন, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় এ বছর ১১ হাজার ৯১০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে ২৩ হেক্টর জমি নিমজ্জিত হয়েছে। আজ (বুধবার) রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়া লক্ষ্য করছি, বৃষ্টিপাত না হলে আশা করছি পানি নেমে যাবে এবং কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।