দেশ বরেণ্য বাউল সাধক উকিল মুন্সির স্মরণানুষ্ঠানের ব্যানারে অন্যের ছবি ব্যাবহার করায় স্থানীয় সংস্কৃতিকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় নেত্রকোনা জেলা শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে অনুষ্ঠানটি হয় শহরের মোক্তারপাড়া এলাকায় ওই একাডেমির নিজস্ব কার্যালয়ে। অনুষ্ঠান চলাকালীন সময় ফেইসবুক ষ্ট্যাটাসের মাধ্যমে ক্ষোভ জানিয়েছেন অনেকেই।
লোকসংস্কৃতির গবেষক সঞ্জয় সরকার তার ফেইসবুক ষ্ট্যাটাসে লিখেন, আমাদের জানামতে উকিল মুন্সির কোনো ছবি নেই। তাঁকে নিয়ে যাঁরা গবেষণাধর্মী বই লিখেছেন তাঁরাও কোনো ছবির সন্ধান দিতে পারেননি। ব্যানারে যে ছবিটি ব্যবহার করা হয়েছে, তা সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার প্রয়াত বাউলশিল্পী কামাল পাশার ছবি হিসেবে পরিচিত, যদিও কামাল পাশারও সত্যিকারের কোনো ছবি নেই। এসব ক্ষেত্রে জেলা শিল্পকলা একাডেমির আরও সতর্ক হওয়া উচিত।
নেত্রকোনায় সুফি কবি হিসেবে খ্যাত এনামূল হক (পলাশ) বলেন, ব্যানারে এ ধরনের ভুল করা ঠিক হয়নি। ভবিষ্যতে শিল্পকলা একাডেমি বিষয়টি সংশোধন করে নেবে বলে আশা করছি।
এ বিষয়ে জেলা সংস্কৃতি কর্মকর্তা সুজিত কুমার সাহার দাবি, বিষয়টি অনিচ্ছাকৃত ভুল। ছবিটি গুগল করে নেওয়া হয়েছিল। এ ভুল ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখতে বলেছেন তিনি।
তিনি জানান, বুধবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে বাউলসাধক উকিল মুন্সির স্মরণানুষ্ঠানটি হয়। অনুষ্ঠানে প্যধান অতিথি ছিলেন নবাগত জেলা প্রশাসক ও জেলা শিল্পকলা একাডেমির সভাপতি মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুদ জামান।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক আরিফুল ইসলাম সরদার। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন জেলা সংস্কৃতি কর্মকর্তা সুজিত কুমার সাহা। উকিল মুন্সির জীবন ও কর্মের ওপর আলোচনা করেন রাজুর বাজার কলেজিয়েট স্কুলের অধ্যক্ষ গবেষক গোলাম মোস্তফা ও নেত্রকোনা সাহিত্য সমাজের সাধারণ সম্পাদক কবি তানভীর জাহান চৌধুরী।
এদিকে, ব্যানারে ভূল ছবি ব্যবহারের ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুদ জামান বলেন, উকিল মুন্সির কোনো ছবি নেই, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। অনুষ্ঠান চলাকালে ফেসবুকে যখন দেখতে পাই এ নিয়ে অনেকেই মন্তব্য করছেন, তখন আমি সঙ্গে সঙ্গে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা উকিল মুন্সির পরিবারের দুই সদস্যের সঙ্গে কথা বলি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তাঁর পরিবারের লোকজনের কাছ থেকে বর্ণনা শুনে একজন শিল্পীকে দিয়ে একটি স্কেচ আঁকার ব্যবস্থা করব। তাঁর পরিবার একমত হলে সেটি পরবর্তী সময়ে উকিল মুন্সির ছবি হিসেবে ব্যবহার করা হবে। আজ ব্যানারে যে বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে, আশা করি ভবিষ্যতে এ রকম ভুলের অবকাশ আর থাকবে না।
উল্লেখ্য, উকিল মুন্সির জন্ম নেত্রকোনার খালিয়াাজুরী উপজেলার নূরপুর বোয়ালী গ্রামে ১৮৬৫ সালে। পরবর্তী সময়ে তিনি মোহনগঞ্জের জৈনপুর গ্রামে থিতু হন। সেখানেই ১৯৭৮ সালে প্রয়াত হন। ‘আষাঢ় মাইসা ভাসা পানি’, ‘পূবালী বাতাসে’সহ বেশ কিছু গানের জন্য তিনি জনপ্রিয় হন।