খুলনায় পরিবেশ রক্ষায় এক অনন্য উদ্যোগ হিসেবে পলিথিন বর্জনের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার বেলা ১১টায় খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির মিলনায়তনে আয়োজিত এই শপথ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে গণতান্ত্রিক অধিকার সুরক্ষা মঞ্চ। নগরীতে এ ধরনের অনুষ্ঠান এই প্রথম বলে আয়োজকেরা জানিয়েছেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ হোসেন বাচ্চু। সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের আহ্বায়ক ও খুলনা আয়কর আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট খান মনিরুজ্জামান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান মেডিকেল অফিসার ডা. এ কে এম কামরুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন নির্বাহী কমিটির সদস্য সচিব কাজী মোতাহার রহমান বাবু, সদস্য অ্যাডভোকেট মো. মমিনুল ইসলাম ও সরদার আবু তাহের। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন অ্যাডভোকেট মো. জোবায়ের শেখ।
সভায় বক্তারা বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, সুন্দরবনের প্রধান তিনটি নদীতে ১৭ প্রজাতির মাছ ও তিন প্রজাতির শেলফিশে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এমনকি বনের মাছের পেটেও পলিথিনের টুকরো পাওয়া গেছে।
বক্তারা জানান, পলিথিনের রাসায়নিক বিষক্রিয়ার কারণে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ক্রমাগত বাড়ছে, যা ভূমিকম্প ও বজ্রপাতের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
গবেষণায় আরও বলা হয়, দেশে প্রতিদিন প্রায় ২৪ হাজার মেট্রিক টন পলিথিন বর্জ্য উৎপন্ন হচ্ছে। এসব বর্জ্য মাটির উর্বরতা নষ্ট করছে, সৃষ্টি করছে জলাবদ্ধতা এবং নদ-নদীর নাব্যতা হ্রাস করছে।
সভায় উল্লেখ করা হয়, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিজ্ঞান সাময়িকী ওয়াটার, এয়ার অ্যান্ড সয়েল পলিউশন-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—বাংলাদেশে ইলিশ মাছের দেহে মাইক্রোপ্লাস্টিকের কণা পাওয়া গেছে, যা মানুষের শরীরে প্রবেশ করে ক্যান্সারের ঝুঁকি তৈরি করছে।
বক্তারা আরও জানান, ২০৪০ সালের মধ্যে প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ মাটি ও পানিতে ৫০ শতাংশ বাড়তে পারে এবং ২০৬০ সালে প্লাস্টিক ব্যবহারের হার তিনগুণে পৌঁছাতে পারে।
এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা ১৯৯৫ সালের পরিবেশ সংরক্ষণ আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়নের দাবি জানান।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত সদস্যরা পলিথিন বর্জনের শপথ গ্রহণের পাশাপাশি পরিবার, প্রতিবেশী ও স্বজনদেরও পলিথিন ব্যবহার পরিহারের পরামর্শ দেন। পলিথিন উৎপাদন, বিক্রি ও বাজারজাতকরণ বন্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতি আহ্বান জানান তারা।
খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির আহ্বায়ক জানান, চলতি মাসেই আরও শতাধিক আইনজীবী পলিথিন বর্জনের শপথ নেবেন।
বক্তারা আশা প্রকাশ করেন, সচেতনতা ও আইন প্রয়োগের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য খুলনা গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
প্রতিনিধি/একে