ই-পেপার |  ঢাকা, বাংলাদেশ  |  মঙ্গলবার | ১৪ অক্টোবর ২০২৫ | ২৯ আশ্বিন ১৪৩২ 
https://thedailydeshbarta.com/ad/1756793693_Self-1.jpg
https://thedailydeshbarta.com/ad/1756793710_Self-2.jpg

সর্বশেষ আপডেট: সোমবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২৫, ২৩:২৮
চলমান বার্তা:
হাতটি সবাই বাড়াই, কবির পাশে দাঁড়াই
দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত কবি শহীদ সাগ্নিক
হিমু আহমেদ
প্রকাশ: রোববার, ১২ অক্টোবর, ২০২৫, ০:২৮ আপডেট: ১২.১০.২০২৫ ১৮:২০  (ভিজিটর : )
অসুস্থতার কাছে পরাজিত হয়ে শয্যাশায়ী ​কবি শহীদ সাগ্নিক।

অসুস্থতার কাছে পরাজিত হয়ে শয্যাশায়ী ​কবি শহীদ সাগ্নিক।

‘লাঘাটার’ স্নিগ্ধস্রোত যেইরূপ চিরন্তন বহে, কবিতারো শুদ্ধ-প্রেম সেইরূপ চিরঞ্জীব রহে।
                                
শহীদ সাগ্নিক

‘দগ্ধ ভুবনের বিদগ্ধ ​কবি’ শহীদ সাগ্নিক আজীবন লড়াই করেছেন শ্রেণীশত্রুর বিরুদ্ধে। বুর্জোয়া সমাজ ব্যবস্থা ছিন্নভিন্ন করে বিপ্লবের আহ্বান জানিয়েছেন। সর্বহারা মানুষের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে অনেকটা ভবঘুরের মতোই সারাজীবন উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়িয়েছেন।বোহেমিয়ান জীবনধারায় অভ্যস্ত অস্থির এই মানুষটি গণমানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের অধিকার আদায় করার জন্য মৌলভীবাজার জেলার আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়িয়েছেন। সত্তরোর্ধ এই কবি আজীবন শাসক শোষকের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে গেলেও আজ অসুস্থতার কাছে পরাজিত হয়ে শয্যাশায়ী অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। চিকিৎসার জন্য বসতভিটা পর্যন্ত বিক্রি করে বর্তমানে নিঃস্ব অবস্থায় পতিত হওয়ায় এই কবির সুচিকিৎসা করা সম্ভব হচ্ছে না। 

​কবি শহীদ সাগ্নিকের কর্মজীবন শুরু হয়েছিল ​প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা দিয়ে।  কিন্তু শ্রেণীসংগ্রামের নেশা তাঁকে স্থির থাকতে দেয়নি। 

তিনি ছিলেন মার্কসবাদ, লেনিনবাদের মতবাদে বিশ্বাসী। সমাজের বৈষম্য তাঁর চোখে ধরা পড়তো সহজেই। কমিউনিস্ট পার্টির আদর্শে কিশোরদেরও উজ্জীবিত করতেন। তিনি শমশেরনগরে 'কিশোর খেলাঘর আসর' পুনর্গঠন করেছিলেন। তাঁর মুখে সব সময় ছিল বিপ্লব ও শ্রেণীসংগ্রামের কথা। বুর্জোয়া সমাজ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ছিল তাঁর তীব্র আক্রোশ। 

​শহীদ সাগ্নিক বাংলা সাহিত্যের একজন শক্তিশালী লেখক ও কবি। কবিতার ক্ষেত্রে শক্তিশালী সনেট এবং স্বরবৃত্ত ছন্দে ছড়া রচনায় তিনি সিদ্ধহস্ত। 'শব্দের কারুকাজ' দিয়ে সাজানো তার ছড়া ও কবিতা পাঠ করলে তিনি যে একজন 'শব্দের কারিগর' তা পাঠকরা সহজেই উপলব্ধি করতে পারবেন। 
কবি শহীদ সাগ্নিক তাঁর রচনা সমগ্র-১ প্রকাশ প্রসঙ্গে উল্লেখ করেছিলেন, ‘ক্ষুদ্র এই জীবনে মানুষের অপার ভালবাসা ও মহানুভবতা যেমন আবাল্য আমাকে করেছে আপ্লুত, তেমনি আত্মকেন্দ্রিক নীচতা, হিংস্রতায় করেছে বিক্ষত, বিপর্যস্ত। জন্মাবধি দেখেছি স্বল্প সংখ্যক মানুষ কর্তৃক সংখ্যাধিক্য নিরন্ন ক্লিষ্ট মানুষের উপর নিষ্ঠুর নিষ্পেষণ ও নির্যাতন’। 

এই বক্তব্যগুলো তিনি যেভাবে সাবলীল ভঙ্গিমায় উপস্থাপন করেছেন, তেমনি প্রয়োগ করেছেন তার শক্তিশালী কবিতাগুলোতেও। বিভিন্ন কবিতায় তিনি সমাজের অসংগতিকে চিহ্নিত করতেও সক্ষম হয়েছেন। চল্লিশের দশকের মুসলিম কবি আব্দুল ওয়াহেদ রেজভীকে উৎসর্গ করে লেখা সনেট 'কবিতার শুদ্ধপ্রেম' তাকে করে তুলেছে কালজয়ী এক ছন্দসৈনিক। 

নিঃসন্দেহে এই সনেটে সেটা মূর্তভাবে ফুটে উঠেছে।

‘এসো আজ হিরন্ময় আকাঙ্খার চতুর্দশপদী
শব্দের দ্বৈরথে চড়ে কল্পনার মায়াকুঞ্জে এসো,

স্নায়ুতে অস্তিত্বে এই শরীরের ছায়াপুঞ্জে 
এসো প্রত্যয়ের রৌদ্রজালে নির্ঝরের মত নিরবধি।

হৃদয় রাঙানো এক পূর্ণিমার শুভ্র চন্দ্রালোকে,
তোমাকে চেয়েছি ঠিক আটপৌরে গৃহস্থালী ঘরে, 
প্রাত্যহিক সুষমায় ফুলেল সৌন্দর্যে থরে থরে
চেয়েছি প্রশান্তচিত্তে চিতল হরিণীর মুগ্ধ চোখে।

মানুষ হরিণী কিংবা ষোড়ষীর দৃপ্ত দুই চোখ,
কবিতার স্পর্শে হয় সপ্নীল ফসলে গর্ভজাত, –
জাগতিক শক্তিমন্ত্রে ঔজ্জ্বল্যের আলোকসম্পাত
আনন্দে অনিন্দ্য নৃত্যে ঋদ্ধ হোক পূর্ণ মর্ত্যলোক।

‘লাঘাটার’ স্নিগ্ধস্রোত যেইরূপ চিরন্তন বহে,
কবিতারো শুদ্ধ-প্রেম সেইরূপ চিরঞ্জীব রহে।

ষাটের দশকের মাঝামাঝি থেকে তিনি কাব্যচর্চা শুরু করেন। তাঁর কবিতায় ছিল মাতৃভূমি ও গণমানুষের প্রতি অগাধ ভালোবাসা। তিনি সমাজের অসংগতি তুলে ধরতেন। শক্তিশালী শব্দ গাঁথুনি দিয়ে কাব্য-অট্টালিকা নির্মাণ করতেন। তাঁর ছড়া লেখার হাত ছিল দারুণ শক্তিশালী। সহজাত সুর, তাল, লয় এবং অন্তমিলসমৃদ্ধ ছিল তাঁর ছড়া। তিনি যেকোনো পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিক ছড়া রচনায় সিদ্ধহস্ত। তাঁর ছড়া ও কবিতায় সমাজ পরিবর্তনের হুংকার ধ্বনিত হয়েছে। 

​এই রণক্লান্ত কবি এখন বার্ধক্যের সীমানায়। বোহেমিয়ান এই কবির বয়স এখন ৭৫ বছর। এখন তিনি এক দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত। জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। সম্প্রতি একাধিক অস্ত্রপ্রচারের পরও এখনো তিনি শয্যাশায়ী। তার সুচিকিৎসার জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। কিন্তু অর্থের অভাবে এই ব্যয়বহুল চিকিৎসা চালিয়ে নেয়া তার পরিবারের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। জীবন সায়াহ্নে এসে তিনি আজ অর্থকষ্টে জর্জরিত। সারা জীবনের ধনিক-শোষক শ্রেণীর বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে আজ কারো মুখাপেক্ষী হতে তিনি অপছন্দ করেন। কিন্তু এই অবস্থায় তাঁর পাশে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করা এই কবিকে বাঁচানো প্রয়োজন। এক টুকরো ভালোবাসা আর সামান্য অর্থ তাঁর জীবন বাঁচাতে পারে। আসুন, সবাই মিলে তাঁর চিকিৎসার জন্য সাহায্যের হাত বাড়াই। 

কবির শুভাকাঙ্ক্ষীদের মধ্যে যারা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে চান, তারা ইচ্ছে করলে নিম্নের বিকাশ/নগদ একাউন্ট নম্বর অথবা ব্যাংক হিসাবে চিকিৎসা খরচ পাঠাতে পারেন। বিকাশ/নগদ একাউন্ট নম্বর- ০১৮১৬-৮৪২৪৫২/, ০১৬৭৮-৩৪৩০৫৩ অথবা, কুলসুমা বেগম, সঞ্চয়ী সিহাব নং ২৮৩৬১০১১৮৭১১৬, পূবালী ব্যাংক পিএলসি,পাঠানটুলা শাখা, সিলেট।

সরকারের পক্ষ থেকেও বিশেষ সহায়তার আবেদন জানিয়েছন কবি পরিবার। এককালের 'দগ্ধ ভুবনের বিদগ্ধ কবি' যেন আমাদের ভুবন থেকে হারিয়ে না যান এ প্রত্যাশা সকলের।

দেশবার্তা/এসএ/এসবি 
মতামত লিখুন:
আরও পড়ুন 
নির্বাচিত সংবাদ
ইনোভিশনের জরিপে ৬ বিভাগে এগিয়ে বিএনপি
ইনোভিশনের জরিপে ৬ বিভাগে এগিয়ে বিএনপি
ডেঙ্গুতে আরও ৩ জনের মৃত্যু
ডেঙ্গুতে আরও ৩ জনের মৃত্যু
‘আরেকটি ১/১১-এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ফিরলে কারও রক্ষা হবে না’
‘আরেকটি ১/১১-এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ফিরলে কারও রক্ষা হবে না’
অর্থনীতিতে নোবেল পেলেন ৩ অধ্যাপক
অর্থনীতিতে নোবেল পেলেন ৩ অধ্যাপক
ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবন সাময়িকভাবে ‌‘কারাগার’ ঘোষণা
ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবন সাময়িকভাবে ‌‘কারাগার’ ঘোষণা
স্বত্ব © ২০২৫ দেশ বার্তা | সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী তোফায়েল আহমদ।
https://thedailydeshbarta.com/ad/1756793725_Self-3.jpg
https://thedailydeshbarta.com/ad/1756793740_Self-4.jpg