চলমান বার্তা: |
শাহিন শাহ আফ্রিদি প্রথম ওভারেই পারভেজ হোসেনকে শূন্য রানে আউট করে উল্লাসে মেতে উঠেন
এশিয়া কাপের সুপার ফোরে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যকার ম্যাচটি কার্যত সেমিফাইনাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। যে দল জিতবে, তারাই ফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হবে। এমন পরিস্থিতিতে, দুবাই ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করা স্বাভাবিক ছিল। টসে জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ অধিনায়ক জাকের আলী, যা দলের বোলারদের শুরুতেই দারুণ সুযোগ এনে দেয়।
তবে, একসময়ে পাকাপাকিভাবে ম্যাচ নিজেদের মুঠোয় আনার পরেও, একাধিক ক্যাচ মিস আর শেষদিকে শাহিন আফ্রিদি ও মোহাম্মদ নেওয়াজের পাল্টা আক্রমণে পাকিস্তান শেষ পর্যন্ত ১৩৫ রানের একটি চ্যালেঞ্জিং স্কোর দাঁড় করায়। জবাব দিতে নেমে বাংলাদেশ দল দারুণ বিপদে পড়লেও, মাঝেমধ্যে ছড়ানো-ছিটানো প্রতিরোধে আশা জাগিয়েছিল। কিন্তু শেষ অবধি মাত্র ১১ রানের পরাজয়ে এশিয়া কাপ থেকে বিদায় ঘণ্টা বাজল বাংলাদেশের। এই হার কেবল ফাইনালের দৌড় থেকেই ছিটকে দিলো না, বরং দেখালো যে ক্রিকেটে ছোট ভুলও কতটা মারাত্মক হতে পারে।
পাকিস্তানের ইনিংস: ধীর শুরু, শেষে ছন্দ
বাংলাদেশের বোলারদের দাপটে পাকিস্তানের ইনিংস শুরুতেই টলে যায়। তাসকিন আহমেদ, মেহেদী হাসান এবং রিশাদ হোসেন - প্রত্যেকেই তাদের প্রথম ওভারেই উইকেট তুলে নিয়ে পাকিস্তানকে কোণঠাসা করে দেন। মাত্র ৫ রানে ২ উইকেট এবং পরে ৪৯ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে পাকিস্তান তখন ঘোর বিপদে। অধিনায়ক সালমান আগা (১৯) ও ফখর জামান (১৩) দ্রুত ফিরলে, পাওয়ার প্লেতে পাকিস্তানের স্কোর দাঁড়ায় মাত্র ২৭ রান, যা বাংলাদেশের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে তাদের সর্বনিম্ন স্কোর।
তবে, এরপরই ম্যাচের মোড় ঘুরতে শুরু করে। একদিকে বাংলাদেশের ফিল্ডারদের বেশ কয়েকটি সহজ ক্যাচ মিস (শাহিন আফ্রিদি ও মোহাম্মদ নেওয়াজের ক্ষেত্রে) পাকিস্তানকে নতুন জীবন দেয়। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে মোহাম্মদ নেওয়াজ (২৫) এবং মোহাম্মদ হারিস (৩১) ষষ্ঠ উইকেটে গুরুত্বপূর্ণ জুটি গড়েন। নেওয়াজ শূন্য রানে জীবন পাওয়ার পর ১৫ বলে ২৫ রান করে দলের স্কোরকে এগিয়ে নিয়ে যান। শেষদিকে শাহিন আফ্রিদিও (১৯) ক্যাচ ফসকে যাওয়া সুযোগ কাজে লাগিয়ে মারমুখী ব্যাটিং করেন। এর ফলস্বরূপ, প্রথম ১০ ওভারে ৪ উইকেটে ৪৬ রান করা পাকিস্তান, শেষ ১০ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ৮৯ রান যোগ করে।
নির্ধারিত ২০ ওভারে পাকিস্তান ৮ উইকেটে ১৩৫ রান সংগ্রহ করে, যা বাংলাদেশের সামনে ১৩৬ রানের লক্ষ্য দাঁড় করায়। বাংলাদেশের হয়ে তাসকিন আহমেদ ৩টি, এবং রিশাদ হোসেন ও মেহেদী হাসান ২টি করে উইকেট শিকার করেন।
বাংলাদেশের ইনিংস: শুরুতেই ছন্দপতন, শেষ অবধি লড়াই
১৩৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের শুরুটা হয় আরও হতাশাজনক। শাহিন শাহ আফ্রিদি প্রথম ওভারেই পারভেজ হোসেনের (০) উইকেট তুলে নেন। এরপর দ্রুতই তাওহিদ হৃদয় (৫) এবং ছন্দে থাকা সাইফ হাসানও (১৮) হারিস রউফের শিকার হন। ৩৮ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে দল তখন চরম চাপে। মেহেদী হাসান (১১), নুরুল হাসান (১৬), এবং অধিনায়ক জাকের আলী (৫) কেউই ইনিংসকে টেনে নিয়ে যেতে পারেননি। ৭৩ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর বাংলাদেশের জয়ের আশা প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছিল।
তবে, শেষদিকে শামীম হোসেন (অপরাজিত ১০) ও অন্যদের ছোট ছোট অবদানে বাংলাদেশ লড়াই চালিয়ে যায়। যখন মনে হচ্ছিল বাংলাদেশ হয়তো ১০০-এর আগেই অলআউট হয়ে যাবে, তখন রিশাদ হোসেনের একটি ছোট ঝড় শেষ আশা জাগায়। শেষ ওভারে যখন ২৩ রান দরকার, তখন রিশাদ হোসেন (১০)* একটি চার ও একটি ছক্কা মেরে সেই রান তাড়া করার অসম্ভব কাজটিও কিছুটা সম্ভব করার চেষ্টা করেন। কিন্তু হারিস রউফের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ ৮ উইকেটে ১২৪ রান করেই থেমে যায়। ফলে, বাংলাদেশ মাত্র ১১ রানের ব্যবধানে হেরে এশিয়া কাপ থেকে বিদায় নেয়। পাকিস্তানের হয়ে শাহিন আফ্রিদি ও হারিস রউফ ২টি করে উইকেট নেন।
বেদনার পরাজয়
১১ রানের এই স্বল্প ব্যবধানে পরাজয় বাংলাদেশের জন্য বড্ড বেদনার। এই ম্যাচে শুরুটা দারুণ হলেও, ফিল্ডিংয়ে একাধিক ক্যাচ মিস আর পরে ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতাই মূলত বাংলাদেশের কপাল পুড়িয়েছে। বিশেষ করে শাহিন আফ্রিদি ও মোহাম্মদ নেওয়াজের মতো মারকুটে ব্যাটসম্যানদের সহজ সুযোগ হাতছাড়া করাটা দলের জন্য ছিল আত্মঘাতী। পাকিস্তানের বোলারদের সামনে বাংলাদেশের টপ অর্ডারের ব্যাটসম্যানদের দায়িত্বজ্ঞানহীন শট নির্বাচনও পরাজয়ের পথ প্রশস্ত করে দেয়।
তবে, এই টুর্নামেন্টে তরুণ ক্রিকেটার রিশাদ হোসেন বল হাতে তার লেগ-স্পিন জাদুতে নজর কেড়েছেন, এবং তাসকিন আহমেদও টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের তৃতীয় বোলার হিসেবে ১০০ উইকেট শিকারের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন। এটি দলের জন্য ইতিবাচক দিক। ছোট ছোট জুটির লড়াই ও শেষ অবধি রিশাদদের চেষ্টা প্রমাণ করে যে দল সহজে হার মানতে চায়নি। কিন্তু ক্রিকেটে কেবল চেষ্টাই সব নয়, সামান্য ভুলেরও চরম মূল্য দিতে হয়। এই পরাজয়ে এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতের প্রতিপক্ষ হিসেবে জায়গা করে নিল পাকিস্তান।
দেশবার্তা/এসএ/এসবি