চলমান বার্তা: |
এবারের এশিয়া কাপে মাত্র ৫৮ বলে ১০৭ রানের ঝকঝকে ইনিংস খেলেন পাথুম নিশাংকা
এশিয়া কাপ ২০২৫-এর সুপার ফোর পর্বের শেষ ম্যাচে ভারত বনাম শ্রীলঙ্কার লড়াই যেন এক পূর্ণাঙ্গ নাটক মঞ্চস্থ করল। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সবরকম উত্তেজনা, উত্থান-পতন আর শেষ মুহূর্তের রোমাঞ্চে ভরপুর ছিল এই ম্যাচ। ফাইনালের আগে নিজেদের শেষ পরীক্ষা দিতে নেমেছিল ভারত, যারা ইতোমধ্যেই ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে। অন্যদিকে, শ্রীলঙ্কা টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে গেলেও জয়ের মাধ্যমে নিজেদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে চেয়েছিল। এমন এক প্রেক্ষাপটে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচ শেষ পর্যন্ত গড়ায় সুপার ওভারের দিকে, যেখানে শেষ হাসি হাসে ভারত।
ভারতের প্রথম ইনিংস: ২০০ রানের পুঁজি
টস জিতে শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক চরিত আসালঙ্কা ভারতকে প্রথমে ব্যাট করতে পাঠান। আর শুরু থেকেই ভারতীয় ব্যাটাররা যেন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের আসল মেজাজ দেখাতে শুরু করেন। ভারতের ওপেনিং জুটি ছিল দুরন্ত। বিশেষ করে অভিষেক শর্মা ছিলেন বিধ্বংসী। তিনি মাত্র ২২ বলে হাফসেঞ্চুরি পেরোন এবং শেষ পর্যন্ত ৩১ বলে ৬১ রানের এক ঝকঝকে ইনিংস খেলে যান। সুপার ফোরে এটি ছিল তাঁর টানা তৃতীয় হাফসেঞ্চুরি।
তবে মিডল অর্ডারে শুভমন গিল ও তিলক ভার্মা কিছুটা সময় নেন। সঞ্জু স্যামসন ও তিলক ভার্মার একটি মজবুত জুটির প্রচেষ্টা দেখা যায়। সঞ্জু স্যামসন ২৩ বলে ৩৯ রানের ঝকঝকে ইনিংস খেলেন। স্লগ ওভারের ব্যাটিং অবশ্য কিছুটা প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি, বিশেষ করে অক্ষর প্যাটেলের স্ট্রাইকরেট ছিল চিন্তার কারণ। তবে ভারত শেষ পর্যন্ত এবারের এশিয়া কাপে ২০৩ রানের সবচেয়ে বড় টার্গেট দিতে সক্ষম হয়। তিলক ভার্মা ৪৯ রানে অপরাজিত থেকে যান।
শ্রীলঙ্কার প্রথম ইনিংস: নিশাঙ্কার লড়াকু সেঞ্চুরি
২০৩ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শ্রীলঙ্কা প্রথম ওভারেই উইকেট হারালেও দমে যায়নি। তাদের ব্যাটিংয়ের মূল স্তম্ভ ছিলেন ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কা। পাওয়ার প্লে-তেই শ্রীলঙ্কা ৭২ রান তুলে নেয়। নিশাঙ্কা একপ্রান্ত আগলে রেখে রানের চাকা সচল রাখেন এবং একসময় আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে তাঁর প্রথম সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন— তাও আবার বিশ্বের এক নম্বর দল ভারতের বিরুদ্ধে। এবারের এশিয়া কাপে এটাই ছিল একমাত্র সেঞ্চুরি। এটি ছিল এক স্মরণীয় ইনিংস।
কিন্তু ম্যাচের মোড় ঘোরে শেষের দিকে। ভারতের বোলাররা, বিশেষ করে কুলদীপ যাদব, ১৬তম ওভারে মাত্র ৪ রান দিয়ে একটি উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচে ভারতকে ফিরিয়ে আনেন। শেষদিকে শ্রীলঙ্কার ব্যাটাররা সচেতন হলে ম্যাচটি ২০ ওভারেই জিতে যেতে পারত, কিন্তু ভারতীয় বোলারদের চাপের মুখে রান তুলতে তাদের কঠিন লড়াই করতে হয়। শেষ দুই বলে শ্রীলঙ্কার ৭ রান প্রয়োজন ছিল। বাউন্ডারি আসে, এবং শেষ বলে ৩ রান দরকার হয়। এই অবস্থায় শ্রীলঙ্কা ২ রান নেওয়ায় ম্যাচটি টাই হয়ে সুপার ওভারে গড়ায়।
সুপার ওভার: অর্শদীপ-সঞ্জুর পারফরম্যান্স
নাটকের শেষ দৃশ্যের জন্য অপেক্ষা ছিল সুপার ওভারে। ভারতের হয়ে বোলিংয়ের দায়িত্ব পান তরুণ পেসার অর্শদীপ সিং। শ্রীলঙ্কার হয়ে ব্যাট করতে আসেন কুশল পেরেরা ও দাসুন শানাকা।
অর্শদীপ প্রথম বলেই কুশল পেরেরার গুরুত্বপূর্ণ উইকেটটি তুলে নেন। পরিবর্ত ফিল্ডার হিসেবে মাঠে নামা রিঙ্কু সিং-এর সেফ হ্যান্ড থেকে ক্যাচ ফসকানো কঠিন। তবে নিশাঙ্কা ও কামিন্দু মেন্ডিস মিলেও স্কোরবোর্ডে খুব বেশি রান যোগ করতে পারেননি। ফলে ভারতের সামনে জয়ের জন্য সহজ লক্ষ্য দাঁড়ায় মাত্র ৩ রান।
ভারতের ব্যাটিংয়ে আসে নাটকীয়তা। প্রথমে আউট-নট আউট নিয়ে ড্রামা চলে। কট বিহাইন্ডের ডিসিশন খারিজ হলেও রান আউটের একটি সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, কিন্তু বল ডেড হয়ে যাওয়ায় তা বাতিল হয়। তবে পরের ডেলিভারিতেই উইকেট পড়ে যায়। শেষ পর্যন্ত, চরম উত্তেজনার মধ্যে ব্যাটসম্যানরা দৌড়ে ৩ রান সম্পূর্ণ করলে ভারত এই রোমহর্ষক ম্যাচে জয় নিশ্চিত করে।
সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ: হতাশার মাঝেও আত্মবিশ্বাস
ভারতের জন্য এই ম্যাচ কিছুটা হতাশার ছিল, কারণ বোর্ডে ২০২ রানের পুঁজি নিয়েও ম্যাচটি শেষ বল পর্যন্ত লড়তে হয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত সুপার ওভারে গড়াতে হয়েছে। তবে অর্শদীপ সিং-এর বিচক্ষণ বোলিং ও শেষ মুহূর্তে রানের জন্য মরিয়া চেষ্টা ভারতকে জয় এনে দেয়। ফিল্ডিংয়ের দুর্বলতা, বিশেষ করে ক্যাচ মিসের ধারা বিশ্বকাপের আগে টিম ম্যানেজমেন্টের জন্য বড় চিন্তার কারণ।
অন্যদিকে, শ্রীলঙ্কার কাছে এই পারফরম্যান্স আত্মবিশ্বাসের খনি। এই প্রথম তারা উড়ন্ত ভারতকে মাটিতে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু তারা তীরে এসে তরী ডুবিয়েছে। অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে জয়ের কিনারায় দাঁড়িয়েও তারা জয় তুলে নিতে সক্ষম হয়নি। এবারের এশিয়া কাপ থেকে তাদেরকে খালি হাতেই বিদায় নিতে হচ্ছে। তবে বড় রান তাড়া করতে নেমে নিশাঙ্কার সেঞ্চুরির সৌজন্যে তারা যেভাবে লড়াই করেছে, তা প্রশংসনীয়। শেষ অবধি না জিতলেও, তারা দেখিয়ে দিয়েছে যে ভারতের বিরুদ্ধেও তারা লড়ার ক্ষমতা রাখে।
সবমিলিয়ে, ফাইনালের আগে ভারত একটি কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হলো, যা হয়তো দলের ছোটখাটো ত্রুটিগুলো ধরিয়ে দিতে সাহায্য করবে। রবিবার, এশিয়া কাপ ফাইনালে ভারত মুখোমুখি হবে তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের। নিঃসন্দেহে এবারের ফাইনালটি অত্যন্ত উত্তেজনাপূর্ণ হবে। ভারতের দুর্বল জায়গা পাকিস্তানকে দেখিয়ে দিয়েছে শ্রীলঙ্কা। পাকিস্তান যদি সে সুযোগ গ্রহণ করতে পারে, হয়তো শ্রীলংকার মতোই তীরে এসে তরী ডুবতে পারে ভারতের।
দেশবার্তা/এসএ/এসবি