এশিয়া কাপে আশানুরূপ ফল না পাওয়ায় বাংলাদেশের ক্রিকেট দলের ওপর ছিল তীব্র চাপ। অন্যদিকে, টি-টোয়েন্টিতে বরাবরই শক্তিশালী প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান, বিশেষত তাদের স্পিন আক্রমণ বিশ্বমানের। এই পরিস্থিতিতে, শারজার মাঠে শুরু হওয়া তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজটি ছিল বাংলাদেশের জন্য নিজেদের প্রমাণ করার এক সুবর্ণ সুযোগ। আফগানদের অহংকার এবং সাম্প্রতিক সাফল্যের সামনে দাঁড়িয়ে সিরিজ শুরু করল বাংলাদেশ—উভয় দলের সমর্থকদের মধ্যেই ছিল চাপা উত্তেজনা।
টস জিতে আফগানিস্তান অধিনায়ক রশিদ খান প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেন। শুরুটা তাদের বেশ ভালোই হয়েছিল। ইব্রাহিম জাদরানের ব্যাটে প্রথম ওভারেই আসে তিন বাউন্ডারি। তবে চতুর্থ ওভারে নাসুম আহমেদ, জাদরানকে বোল্ড করে আঘাত হানেন। এরপর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে আফগানরা।
বোলারদের মধ্যে তানজিম হাসান এবং লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন ছিলেন দুর্দান্ত। রিশাদ তাঁর ঝুলিয়ে দেওয়া বলে লোভ দেখিয়ে তুলে নেন গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। একসময় ৩৩ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর, রহমানউল্লাহ গুরবাজ (৪০) এবং আজমতউল্লাহ ওমরজাই (১৮) জুটি গড়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু রিশাদের ঘূর্ণি ভাঙল সেই জুটি। ১৫১ রানে পৌঁছতে আফগানরা হারায় ৯ উইকেট। বাংলাদেশের পেস এবং স্পিনের সম্মিলিত আক্রমণ আফগানিস্তানকে বড় স্কোর গড়তে দেয়নি।
বাংলাদেশের দুই তরুণ ওপেনার তানজিদ হাসান ও পারভেজ হোসেন এক অসাধারণ শুরু এনে দেন। তাঁদের সাবধানী অথচ আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে ভর করে দল প্রথম ১০ ওভারেই তুলে ফেলে প্রায় ১০০ রান। দুজনেই দারুণ ফিফটি (পারভেজ ৫৪, তানজিদ ৫১) পূর্ণ করেন।
তাঁদের উদ্বোধনী জুটিটি ছিল ১০৯ রানের, যা টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সফল রান তাড়ায় ভিত্তি স্থাপন করে। ১১তম ওভারে পারভেজ আউট হওয়ার পর, সাইফ হাসান দ্রুত বিদায় নিলে চাপে পড়ে বাংলাদেশ।
১০৯ রানের উদ্বোধনী জুটির পর জয় যখন প্রায় হাতের মুঠোয়, তখনই নেমে আসে বিপর্যয়। আফগান অধিনায়ক রশিদ খান যেন একাই বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডারে ঝড় তোলেন। তাঁর স্পিন-ঘূর্ণিতে মাত্র ৭ রানের ব্যবধানে বাংলাদেশ হারায় ৪টি উইকেট!
১১৬/৬—এই স্কোর বোর্ড যখন দেখাচ্ছে, তখন মনে হচ্ছিল বাংলাদেশ বুঝি ম্যাচটা হেরেই গেল। এই পরিস্থিতি মিডল অর্ডারের ভয়াবহ ব্যর্থতাকেই নির্দেশ করে। অভিজ্ঞ ও অনভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানদের দ্রুত আউট হয়ে যাওয়া প্রমাণ করে যে, বড় স্কোর তাড়া করার মানসিক চাপ সামলাতে এই বিভাগ এখনও যথেষ্ট প্রস্তুত নয়। উদ্বোধনী জুটির তৈরি করা প্ল্যাটফর্মের সঠিক সদ্ব্যবহার করতে পারেনি মিডল অর্ডার।
নুরুল-রিশাদের ফিনিশিং টাচ: জয়ে সিরিজের শুরু
তবে যখন সবাই পরাজয়ের আশঙ্কা করছিল, তখনই ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হন নুরুল হাসান সোহান ও তরুণ লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন। সপ্তম উইকেটে তাঁদের আক্রমণাত্মক ও অবিচল জুটিটি মাত্র ১৮ বলে ৩৫ রান তুলে নেয়!
বিশেষ করে ১৯তম ওভারে আজমতউল্লাহ ওমরজাইকে পরপর দুটি ছক্কা মেরে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি নিজেদের হাতে নিয়ে নেন নুরুল। রিশাদও একটি বাউন্ডারি মেরে জয় নিশ্চিত করেন। ইনিংসের ৮ বল হাতে রেখেই ৬ উইকেটে ১৫৩ রান করে বাংলাদেশ।
এই জয়ের মধ্য দিয়ে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। মিডল অর্ডারের ব্যর্থতা সত্ত্বেও জয় নিশ্চিত করতে পারাটা দলের জন্য বিরাট আত্মবিশ্বাসের কারণ। এই সিরিজটি বাংলাদেশের জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে, যেখানে তরুণদের পারফরম্যান্স এবং সঠিক সময়ে ম্যাচ ফিনিশ করার ক্ষমতা প্রমাণ হলো। সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি শুক্রবার অনুষ্ঠিত হবে।
দেশবার্তা/এসএ/এসবি